নগর উন্নয়নের জন্য বাস্তবায়িত হোক সকল মহাপরিকল্পনা

| শুক্রবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১১তম সাধারণ সভায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। তন্মধ্যে ওয়ার্ড অফিসে সরবরাহকৃত আসবাবপত্র নিম্নমানের অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নগরের বর্জ্য অপসারণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা, মশক নিধন উল্লেখযোগ্য। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নগরের বিলুপ্ত হওয়া ২১টি খাল পুনরুদ্ধারেরও ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৫টি খাল খনন ও সমপ্রসারণ করলেও ২১টি খাল বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। সিএস খতিয়ানে এগুলোর অস্তিত্ব থাকলেও এখানে বহুতল ভবনসহ নানা ধরনের স্থাপনা রয়েছে। দখলকৃত এই খালগুলো চিহ্নিত করে এগুলো অবশ্যই পুনরুদ্ধার করা হবে এবং কাউন্সিলররা এই খালগুলো চিহ্নিত করবেন। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে খালগুলোর যেখানে বাঁধ বা দেয়াল আছে সেগুলো সিডিএর সাথে সমন্বয় করে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে প্রাণঘাতী কোনো বিপর্যয় না ঘটে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ জালাল মিশুক তাঁর এক লেখায় বলেছেন, বিচিত্র মানুষের উপস্থিতি ও অপরূপ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানে গড়ে ওঠে মিশ্র সংস্কৃতি ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য, যার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলার মিল নেই। বৈশ্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামেরও উন্নয়ন হয়েছে। তবে কায়েমি স্বার্থবাদীরা চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে উঠতে দেয়নি। চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের সঠিক পরিকল্পনা করা হয়নি। তাই বিশৃঙ্খলভাবে চট্টগ্রাম শহর আকারে বড় হয়েছে। অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদ হারিয়ে হয়েছে রুগ্‌ণ।
শুধু মহাপরিকল্পনা করলেই চলবে না, তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এর আগের মহাপরিকল্পনাগুলো কেন বাস্তবায়িত হয়নি, তারও মূল্যায়ন করা দরকার। নইলে একই ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ সমস্যার সমাধান হবে না।
৬০ থেকে ৭০ বছর আগে খাল ও নদীর মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরের বৃষ্টির পানি সহজেই নিষ্কাশন হতো। প্রাচীনকাল থেকে বাণিজ্যতরিগুলো শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে যেত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, চকবাজার ছিল চট্টগ্রামের অন্যতম বাজার। মালামাল নিয়ে নৌকাগুলো খাল বেয়ে সেখানে পৌঁছে যেত।
কিন্তু নগরটি অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠার ফলে আজ জলাবদ্ধতা খাতুনগঞ্জ, চাকতাইয়ের মতো বাণিজ্যকেন্দ্রের প্রকট সমস্যা সৃষ্টি করছে। শুধু তা-ই নয়, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, মোহরাসহ নিম্নাঞ্চলের আবাসিক এলাকায় বর্ষার মৌসুম ছাড়া ও জোয়ারের পানিতে সয়লাব। সেখানে তখন নৌকায় জনগণ যাতায়াত করে।
চট্টগ্রামে যে কয়টা পাহাড় এখনো ন্যাড়া হয়ে বেঁচে আছে, সেগুলোর সৌন্দর্যের চেয়ে ধ্বংসের আতঙ্ক হয়ে বেশি মূর্তমান। বর্ষা এলেই লোকজন সরানোর জন্য তৎপর হয় প্রশাসন।
ইতোপূর্বে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের ইচ্ছা আছে। কিন্তু এই অগ্রাধিকার কাজে লাগাতে হবে। এজন্য সবার অংশগ্রহণ লাগবে। আমি কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে হবে না। শুধু একজন মেয়র নির্বাচন করে তার ওপর সব বোঝা উঠিয়ে দিলে হবে না। সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। আর তা করতে হলে মেয়রকে এগিয়ে আসতে হবে। আবার চট্টগ্রামে যারা বিভিন্ন সেবা সংস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরও সহযোগিতা করতে হবে। নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো গেলে চট্টগ্রামের উন্নয়নে সেখানে টাকা দেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও টাকা দিতে সম্মত হবেন, আমারও উৎসাহ লাগবে, যদি সে টাকা আপনারা কাজে লাগান। বরাদ্দ পাওয়া টাকা কাজে লাগাতে আপনাদের নিজেদের মধ্যে এনগেজমেন্ট ও কমিটমেন্ট থাকতে হবে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, চট্টগ্রাম আধুনিক নগরের জন্য ২১ বছরের নতুন মাস্টারপ্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এই মহাপরিকল্পনার আওতায় পুরো নগরীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশদ সমীক্ষা হবে। সেই সমীক্ষার ভিত্তিতে অনুযায়ী তৈরি হবে ২০২০ থেকে ২০৪১ সালের ২১ বছরের নতুন মহাপরিকল্পনা। এটি সিডিএর তৃতীয় মহাপরিকল্পনা। এর আগে ‘প্রিপারেশন অব স্ট্রাকচার মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান ১৯৯৫’ নামে চট্টগ্রাম শহরের জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সিডিএ। কিন্তু কখনো কোনো মহাপরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমরা আশা করবো, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে অচিরেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে