সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরের কোর্ট বিল্ডিং থেকে ৬ নম্বর বাসে করে আগ্রাবাদ বাসায় ফিরছিলেন মো. মাহিউদ্দিন। নিউ মার্কেট মোড় থেকে কয়েকজন ব্যক্তিও এক সঙ্গে সেই বাসে উঠে। বাস নতুন রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত আসলে মাহিউদ্দিনের হাতে থাকা মোবাইলটি তাদের ভিতর থেকে একজন ছিনিয়ে নিয়ে বাস থেকে নেমে যায়। চোরকে ধরার জন্য ভুক্তভোগী নামতে চাইলে তাদের সঙ্গে বাসে উঠা বাকিরা নামতে দেয়নি। এর কিছুক্ষণ পর নামলে ততক্ষণে পালিয়ে যায় চোর। ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার। এ নিয়ে সেদিনই কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভুক্তভোগী।
এই ভুক্তভোগী শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো. মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, আমি বাসের দুই নম্বর সিটে ভিতরের দিকে বসেছি। এখান থেকে বাইরে থেকে কেউ মোবাইল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তারা কয়েকজন মিলে উঠে বাসের ভিতর থেকেই চুরিটি করেছে। ঘটনার সাথে সাথে আমি নামতে চাইলে বাকিরা আমাকে ঘিরে ধরে। কৃত্রিম ভীড় তৈরি করে তারা। তিনি বলেন, একই চিত্র দেখেছি পরদিন বুধবার। একইভাবে আমি গাড়িতে উঠি এবং নিউ মার্কেট মোড় আসলে সেই লোকগুলোই আবার একসাথে গাড়িতে উঠে। তবে সেদিন তারা গাড়িতে উঠার সাথে সাথে বাকিরা টের পেয়ে সতর্ক হয়ে গেলে আর চুরি করতে পারেনি। আমি এই ঘটনায় জিডি করেছি। এর সঠিক বিচার দাবি করছি। জানা যায়, একই ঘটনা দিনে–দুপুরে ঘটেছে কাস্টম এলাকায়। আরেকটি ঘটনা ঘটেছে ইস্পাহানি মোড় এলাকায়। এছাড়া নগরে এরকম চুরি–ছিনতাইয়ের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে ছিনতাইকারী চক্র ওৎপেতে থাকে চুরি করার জন্য। চক্রের সদস্যরা একসাথে গাড়িতে উঠে। চুরির করার পর বাকিরা ভুক্তভোগীকে গাড়ি থেকে আর নামতে দেয় না। এক ধরনের কৃত্রিম ভীড় তৈরি করে রাখে চক্রের বাকি সদস্যরা। এই সুযোগে চোর মোবাইল বা দামি মালামাল নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। শুধু মোবাইল নয়, নারীদের গহনাসহ দামি মালামাল চুরির ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। ভুক্তভোগীরা জানান, চুরির করার পর চোর বীরদর্পে চলে যায়। আশপাশে থাকা বাকি লোকজন কিছুই বলে না তাদের। এটা নিয়ে তেমন একটা তদারকি নেই পুলিশ প্রশাসনের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে এসব ঘটনা বেশি ঘটছে। এর মধ্যে নিউ মার্কেট এলাকায় চুরি ছিনতাই বেশি হচ্ছে বলে জানা গেছে। নিউ মার্কেটে নগরের সব দিক থেকে সড়ক এসে যুক্ত হয়েছে। এতে সব সময় জনসমাগম লেগে থাকে। ভীড়ের সুযোগে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে চোর চক্র ছিনতাই করে থাকে। এছাড়া নগরের আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, লালখান বাজার, দামপাড়া, জিইসি, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, চকবাজার, অলংকার ও বড়পোল, একেখান গেট এলাকাসহ ব্যস্ততম সড়ক ও এলাকাগুলোতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন আজাদীকে বলেন, আগে তো চুরি হতো গোপনে। চুরি করে চোর পালিয়ে যেত দৌঁড়ে। এখন চোর দৌঁড়ে না। চুরি করার পর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলে যায়। মনে হয় যেন কোনো মহৎ কাজ সম্পন্ন করে তিনি চলে যাচ্ছেন। আরেকজন বলেন, আমি দেখেছি গাড়ির পিছনের সিটে বসা লোকদের থেকে মোবাইল মূল্যবান জিনিস নিয়ে যেতে। নিউ মার্কেট এলাকায় মুহূর্তে মুহূর্তে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। একটি রাস্তার এপাড়ে ঘটলে আরেকটি ঘটছে ওপাড়ে।
শুধু লোকাল বাসে না, রিকশায় দিনেদুপুরে এসব ঘটনা ঘটছে। কেউ দেখলে সেটার প্রতিবাদও করছে না। আর আগের মতো জানালা দিয়ে মোবাইল নেয় না, সরাসরি বাসে উঠে হাত থেকে নিয়ে নেয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানের পর এসব ঘটনা কমে গিয়েছিল। মাঝে অনেকদিন পুলিশের তদারকি কম থাকার সুযোগে চোর চক্র আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব ঘটনার দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে দিন দিন এগুলো আরও বাড়বে। একটা সময় মানুষ নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারবে না। ভয়ে বাসা থেকেও বের হবে না।
তবে এই বিষয়ে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এডিসি (পিআর) তারেক আজিজ। তিনি আজাদীকে বলেন, আমরা চুরি–ছিনতাইয়ের ব্যাপারে খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। গত কয়েকদিনের অভিযানে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারসহ অভিযুক্তকে ধরতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এছাড়া চুরি–ছিনতাই ঠেকানোর জন্য কার পেট্রোলিংয়ের পাশাপাশি আমরা মোটরসাইকেল পেট্রোলিং অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা গোয়েন্দা তথ্যের সহায়তাও নিচ্ছি। সাদা পোশাকে অনেকে নগরের মোড়ে মোড়ে, পাড়া–মহল্লার ভিতরে এসব কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। মোটকথা চুরি–ছিনতাই বন্ধ করতে যা যা করা লাগে আমরা সেটা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।