নগরের চলাচলকারী যানবাহনের ৩৪ শতাংশই মানছে না নির্ধারিত গতিসীমা। গতিসীমা না মানার শীর্ষ তিনে আছে জিপগাড়ি হিসেবে পরিচিত ‘এসইউভি’, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ এসইউভি, ৪৫ শতাংশ মোটরসাইকেল ও ৪১ শতাংশ প্রাইভেট কার রয়েছে। এছাড়া ৩২ শতাংশ পিকাপ, ৩১ শতাংশ থ্রি হুইলার, ২৮ শতাংশ মিনিবাস, ২৭ শতাংশ ট্রাক এবং ২৬ শতাংশ বাসও গতিসীমা মেনে চলছে না শহরে।
জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট (জেএইচআই–আইআরইউ) এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকায় সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণে এ তথ্য ওঠে আসে। এতে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে বিআরটিএ প্রণীত মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ বাস্তবায়ন করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সড়ক আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করার জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান ঝুঁকি যানবাহনের অতিরিক্ত গতি।
গতকাল বুধবার টাইগারপাস চসিক সম্মেলন কক্ষে ‘সড়ক দুর্ঘটনার আচরণগত ঝুঁকি বিষয়ক পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা’ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। সিআইপিআরবি’র সহায়তায় চসিক এবং জেএইচআই–আইআরইউ যৌথভাবে এ গবেষণা ফলাফল প্রকাশ’ সভা আয়োজন করে। সিআইপিআরবির আরটিআই প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিটের পরিচালক ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, পর্যবেক্ষণটি ছিল গত বছরের (২০২৪) অক্টোবর–নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের। চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকির হার নিরূপণ করতে এ সময়ে নগরের ১৫টি স্থানে মোট ৮৪ হাজার ৪৫৪টি যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। সপ্তাহের (কার্যদিবস ও ছুটির দিনসহ) একই স্থানে টানা তিন দিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ চালানো হয়।
ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী জানান, যেহেতু চট্টগ্রাম শহরের সকল রাস্তায় নির্দিষ্ট গতিসীমা নির্ধারণ করা সাইন নেই, তাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে নির্ধারিত গতিসীমার ক্ষেত্রে মহাসড়কে প্রতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং শহর এলাকার সড়কে প্রতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতিসীমা হিসেবে বিবেচনা করে গবেষণালব্দ তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিআইজিআরএস অংশ হিসেবে জেএইচআই–আইআরইউ এবং সিআইপিআরবি ২০২২ সালের মে থেকে চসিক এলাকায় রোডসাইড অবজারভেশন স্টাডি পরিচালনা করছে। গতকালের ফলাফলটি ৬ষ্ঠ পর্বের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে পঞ্চম পর্বের ফলাফলে ৪৩ শতাংশ যানবাহনের গতিসীমা না মানার তথ্য ছিল।
গতকাল ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের একটি অগ্রাধিকারমূলক কাজ। আর সড়ককে নিরাপদ করার জন্য তথ্য–উপাত্ত অত্যন্ত জরুরি। কোথায় সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে, কেন হচ্ছে, তা প্রতিরোধে কী করণীয় তা বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে বের করা সম্ভব। আর এসব তথ্যকে কাজে লাগিয়ে আমরা পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারবো। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারও ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের হার অর্ধেকে কমিয়ে আনার মাধ্যমে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সিআইপিআরবি’র রোড সেফটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কাজী বোরহান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, গবেষণা ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চসিক কাজ করবে। তিনি ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিকল্পনা করার সময় রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি–এর ফলাফল ব্যবহার করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন।