নগরে এবার বইমেলা হবে?

অপেক্ষায় লেখক-প্রকাশক, এখনো সাড়া নেই চসিকের

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

বড় পরিসরে গত দুই বছর বইমেলা আয়োজন করে চমক সৃষ্টি করেছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। কুড়িয়েছিল প্রশংসা। এবারও বইমেলার প্রতি লেখক এবং প্রকাশকের আগ্রহ আছে। অপেক্ষায় আছে পাঠকও। অথচ সাড়া-শব্দ নেই আয়োজক চসিকের। তবে কি এবার নগরে বইমেলা হচ্ছে না?

অবশ্য নগরবাসী বিশ্বাস করেন, অতীতের অর্জন ম্লান হতে দেবে না সংস্থাটি। ২০১৯ সালে বইমেলা ঘিরে নবযাত্রার যে সূচনা করেছিলেন তৎকালীন মেয়র, তা এগিয়ে যাবে বর্তমান মেয়রের হাত ধরে। আরো সমৃদ্ধ এবং বৃহৎ পরিসরে বইমেলা আয়োজন করে বইপ্রেমীদের হৃদয়ের পিপাসা মিটাবেন নতুন মেয়র।

বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা। গত চার দশক ধরে রাজধানীতে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন শুরু হয় মাসব্যাপি অমর একুশে বইমেলা। বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে এবার মেলা শুরু হয়নি নির্দিষ্ট দিনে। আদৌ মেলা হবে কিনা সেটা নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা। তবে শেষ পর্যন্ত রাজধানীতে মেলা শুরু হচ্ছে আগামী ১৮ মার্চ। যার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গত জানুয়ারি মাসে। অথচ চট্টগ্রামে এখনো মেলা আয়োজনের কোনো সিদ্ধান্তই নেয়নি চসিক। এমনকি সিদ্ধান্ত নিতে কোনো বৈঠক পর্যন্ত হয়নি।

একসময় বইমেলা বলতেই পাঠকের চোখে কিংবা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে বাংলা একাডেমি বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। যা ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছিল চট্টগ্রামবাসীর চিন্তা, মনন ও কল্পনা থেকে। তার জায়গা দখলে নেয় নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ল জিমনেশিয়াম মাঠ। যেখানে গত দুই বছর চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিসরে এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ বইমেলা সম্পন্ন হয়। দু’বারই নির্দিষ্ট দিনে তথা ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে মেলা। ফলে পাঠক স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, প্রতিবছর নির্দিষ্ট গন্তব্যে ছুটবেন তারা। এবার মহামারী সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে বটে। কিন্তু সামান্য উদ্যোগ ও আন্তরিকতার মিশেলে সম্ভব গন্তব্যে পৌঁছুনো। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে সিটি কর্পোরেশনকেই।

একসময় ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে কমপক্ষে তিনটি বইমেলার আয়োজন করতো বিভিন্ন সংস্থা এবং সংগঠন। এতে বিভ্রান্ত হতেন পাঠক এবং দর্শনার্থীরা। ফলে সেগুলো সত্যিকারের বইমেলা হয়ে উঠেনি। এ নিয়ে ছিল বইপ্রেমীদের নানা অভিযোগ। ছিল হতাশাও। সর্বশেষ ২০১৯ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে শুরু হয় অভিন্ন বইমেলা। যার ধারাবাহিকতা ছিল গত বছরও।

দু’বারই সিটি কর্পোরেশন আয়োজন করলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে মেলা বাস্তবায়ন করে। এতে সত্যিকারের বইমেলা উপহার পায় পাঠক। দূর হয় অতীতের দৈন্যতার ছাপ। পাঠকও খুঁজে পেয়েছিল তার গন্তব্য। ডিসি হিল ও শহীদ মিনারের সামনে হওয়া একাধিক মেলায় বিভ্রান্ত পাঠক ছুটে যান জিমনেশিয়াম মাঠে। স্টলে স্টলে সাজানো নতুন বইয়ের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে নগর থেকে জেলায়। যার টানে উপজেলা থেকেও বইমেলায় প্রতিদিন ছুটে আসতেন পাঠক। এবার যা এখনো অনিশ্চিত।

ইতিহাস বলছে, ষাটের দশকে দেশের প্রকশনা শিল্পে বড় ভূমিকা রাখত চট্টগ্রাম। ওইসময়টা ছিল চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্পের স্বর্ণযুগ। তখন শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান অনেক লেখকের বইও প্রকাশ করেছে চট্টগ্রামের প্রকাশনা সংস্থাগুলো। কালের আবর্তে চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্পের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হয়নি। বরং ধস নেমেছে। এর পেছনে আছে নানা কারণ। তবে ২০১৯ সালে বইমেলা সফল হওয়ায় স্থানীয় প্রকাশকরা আশার আলো দেখতে পান। ওই বছর ২১ দিনে (প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মেলার সময় দুইদিন বেড়েছিল) আনুমানিক সাড়ে ১৩ কোটি টাকার টাকার বই বিক্রি হয়েছে। পরের বছর ২০ দিনে বিক্রি হয়েছে ১৮ কোটি টাকার বই। ফলে এবারও মেলাকে ঘিরে প্রস্ততি আছে প্রকাশকদের। ইতোমধ্যে প্রচুর বইও প্রকাশ করেছে। তাই শেষ পর্যন্ত মেলা না হলে চট্টগ্রামের প্রকাশনা শিল্পের জন্য তা বড় আঘাত হবে বলে মনে করছেন প্রকাশকরা। তারা জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ৪৫টি প্রকাশনা সংস্থা আছে। মেলাকে ঘিরে গড়ে ৪০ থকে ৫০ টি বই প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানগুলো।

এ প্রসঙ্গে গত দুই বারের অভিন্ন বইমেলা পরিচালনা কমিটির যুগ্মসচিব জামাল উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বইমেলা আয়োজনের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা সব সময় যোগাযোগ করছি। তাছাড়া গত দুই বছর বড় পরিসরে মেলা হয়েছে। যা সিটি কর্পোরেশনসহ চট্টগ্রামবাসীর বড় অর্জন। বিষয়টি মেয়র মহোদয়েরও নলেজে আছে। আশা করছি এবার মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নিবেন। আমাদের চাওয়া ১৮ মার্চ না পারলে ২৪ মার্চ থেকে মেলা শুরু করা হোক। তিনি বলেন, মেলা না হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রকাশকরা। তারা ইতোমধ্যে কিন্তু বই প্রকাশ করে ফেলেছে।

গতবারের বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, চলতি সপ্তাহে মেয়রের সঙ্গে বসে বইমেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। আয়োজনের সিদ্ধান্ত হলে বাস্তবায়ন করতে তেমন সমস্যা হবে না। প্রকাশকদেরও আগ্রহ আছে। সেক্ষত্রে ঢাকায় বাংলা একাডেমির বইমেলার সাথে মিলিয়ে কাছাকাছি সময়ে চট্টগ্রামেও আয়োজন করা যেতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগাম আনারসে বাজিমাত
পরবর্তী নিবন্ধআলকরণ ওয়ার্ডে নির্বাচন কাল প্রচারণা শেষ, প্রস্তুতি সম্পন্ন