সাধারণত শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। শুষ্ক আবহাওয়ায় অগ্নিঝুঁকিও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ফায়ার সার্ভিসের মতে, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টাকে অগ্নিঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময়ে শুষ্ক আবহাওয়া আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। তাই এই সময়ে বাড়তি সতর্ক অবস্থানে থাকেন ফায়ার কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরে দিন দিন পুকুর বা জলাশয় কমে যাচ্ছে। যে কয়টি আছে সেগুলোও বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তবে অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় নগরীর দুই শতাধিক পয়েন্টে ফায়ার হাইড্রেন্ট বা পানির বিতরণ লাইন স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতাও আগের চেয়ে বেড়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ বস্তি ও ২৯ মার্কেটের তালিকা প্রকাশ করে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লিখা ব্যানারও সাঁটানো হয়। কিন্তু এরপরেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। মূলত বস্তিতে নিম্নবিত্তের লোকজন বসবাস করে। এছাড়া মার্কেটের গলিগুলো সরু ও গিঞ্জি হওয়ার কারণে অগ্নিদুর্ঘটনা হলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। এতে আগুন নেভাতে ফায়ার কর্মীদের খুব বেগ পেতে হয়।
জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ বস্তির মধ্যে রয়েছে–লামার বাজার ফায়ার স্টেশনের অধীনে ভেড়া মার্কেট বস্তি, ইপিজেড স্টেশনের অধীনে রেলওয়ে বস্তি, কলসি দীঘির পাড় কলোনি এবং আকমল আলী এলাকাধীন কলোনি। আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের অধীনে ঝাউতলা বস্তি, আমবাগান বস্তি, সেগুনবাগান বস্তি, কদমতলী রেলওয়ে বস্তি, বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের আওতায় ২নং গেইট রেলওয়ে বস্তি, ড্রাইভার কলোনি, অক্সিজেন রাস্তা সংলগ্ন বস্তি, বার্মা কলোনি, রৌফাবাদ কলোনি এবং শেরশাহ কলোনি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ২৯ মার্কেটের মধ্যে রয়েছে– কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন এলাকার হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার মার্কেট, নজু মিয়া মার্কেট ও বলির হাট মার্কেট। এছাড়া লামা বাজার ফায়ার স্টেশন এলাকার ভেড়া মার্কেট, চাউলপট্টি, শুটকি পট্টি, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, মিয়া খান নগর পুরাতন জুট মার্কেট এবং ওমর আলী মার্কেট। বন্দর ফায়ার স্টেশন এলাকার পোর্ট মার্কেট, বড়পুল বাজার, ইশা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকির হাট মার্কেট, নয়া বাজার মার্কেট ও ফইল্লাতলী বাজার। ইপিজেড ফায়ার স্টেশন এলাকার চৌধুরী মার্কেট ও কলসি দীঘির পাড় এলাকাধীন মার্কেট। চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় রয়েছে চক ভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল ও গোলজার মার্কেট। এছাড়া নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন এলাকার মধ্যে রিয়াজুদ্দীন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরি বাজার ও তামাকুমন্ডি লেইন। অপরদিকে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় রয়েছে সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট এবং কর্ণফুলী মার্কেট। তবে বায়েজিদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় কোনো মার্কেট নেই।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ–পরিচালক দিনমনি শর্মা দৈনিক আজাদীকে বলেন, শীত মৌসুমে আগুন লাগার প্রবণতা বাড়ে। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বস্তি ও মার্কেট চিহ্নিত করেছি। এছাড়া মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও বস্তির মালিকদের সাথে কথা বলেছি। বিভিন্ন মার্কেটে আমরা নিয়মিত মহড়াও করেছি। মহড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সচেতন করা। আমরা তো এরচেয়ে বেশি কিছু করতে পারি না। আমরা যখন মহড়া করি তখনই বলি, যখন আগুন লাগে, তখন আগুন খুব ছোট থাকে। এটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে যায়। তাই অন্তত ২০ মিনিট যদি আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলে আগুনের ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। কারণ আমাদের টিম পৌঁছতে তো ২০ মিনিট লাগে। তাই মার্কেট–বস্তিতে পানির রিজার্ভার ট্যাংক রাখতে হবে। এছাড়া অন্তত ফায়ার এক্সটিংগুইসার (অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র) থাকলে বড়সড় আগুন ঠেকানো যায়। অন্যদিকে বস্তিঘরগুলো সাধারণত বেড়া ও টিনের ছাউনির হয়ে থাকে। এসব ঘরে অসংখ্য বৈদ্যুতিক তার পেছানো থাকে। এসব বৈদ্যুতিক তার থেকে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। কিছু কিছু মার্কেটেও একই অবস্থা দেখা যায়।