নগরের সব বাজার হবে পলিথিনমুক্ত

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

পাইলট প্রকল্পে তিন বাজারে ‘সাফল্য’ পাওয়ায় নগরের সবকটি বাজারকে পলিথিনমুক্ত করতে চাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তা কার্যকর হবে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি রেয়াজউদ্দিন বাজারে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এর আগে ওইদিন পর্যন্ত বাজারগুলোতে প্রচারণা চালানো হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে তালিকাভুক্ত বাজার আছে ২৫টি। এর মধ্যে তিনটি বাজারকে আগেই পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করে চসিক। গত ২৯ নভেম্বর পলিথিমুক্ত বাজার কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। পরবর্তীতে ১ ডিসেম্বর থেকে বাজারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে চসিক। বাজারগুলো হচ্ছে কাজীর দেউরি, কর্ণফুলী মার্কেট এবং চকবাজার কাঁচাবাজার। বাজারগুলো পলিথিমুক্ত হয়েছে বলে দাবি করেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও চসিক পরিবেশ উন্নয়ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন। তাই অবশিষ্ট বাজারগুলোকেও পলিথিনমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে অবশিষ্ট ২২ বাজারকেও পলিথিনমুক্ত করার লক্ষ্যে গতকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটির প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সবগুলো বাজার হবে পলিথিনমুক্ত। এর আগে ১ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাজারগুলোতে তাদের স্ব স্ব কমিটির উদ্যোগে মাইকিং, পোস্টার, পেস্টুন, ব্যানার, লিফলেটসহ সকল ধরনের প্রচারপ্রচারণা চালাবেন। এছাড়া ৪১ ওয়ার্ডে চসিকের উদ্যোগে মাইকিং করা হবে। ১১ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চসিকের দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট বাজার পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা ও সতর্কতা প্রদান করবেন। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি বাজারে কোনো পলিথিন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, পলিথিনমুক্ত বাজার করতে ব্যবসায়ীরা সবাই একমত হয়েছেন। তারা নিজেরাই প্রচারপ্রচারণা চালাবেন। তবে ৪১টি ওয়ার্ডে অবস্থিত বাজারগুলোতে স্ব স্ব কাউন্সিলরদেরও বাজার কমিটির সাথে সমন্বয়পূর্বক প্রচারপ্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে নির্দেশনা প্রদান করেছি।

মেয়র বলেন, পলিথিন নগরবাসীর জন্য একটি অভিশাপ। এ পলিথিনের কারণে জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। পলিথিনের কারণে নালানর্দমায় পানি জমে মশার প্রজনন অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, পলিথিন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে জমাট হয়ে আট ফুটের বেশি শক্ত স্তর তৈরি করেছে। ফলে কর্ণফুলী নদীতে ড্রেজিং করতে গিয়ে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। নেদারল্যান্ড থেকে অত্যাধুনিক ড্রেজিং মেশিন এনেও নদীর পুরু পলিথিন স্তর ভেদ করে ড্রেজিং সম্পন্ন কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা হারিয়ে মরা নদীতে পরিণত হবে। কর্ণফুলীর নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে চট্টগ্রাম বন্দর কার্যকারিতা হারাবে। তখন এর পরিণাম ভয়াবহ হয়ে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেবে। তাই এই অবস্থায় পরিবেশের ক্যান্সার স্বরূপ এ পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

চসিক পরিবেশ উন্নয়ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেয়া তিনটি বাজার পলিথিনমুক্ত হয়েছে। সেখানে আমরা সফল হয়েছি। অবশ্য ব্যবসায়ীরাও সহযোগিতা করেছেন। আশা করছি বাকি বাজারগুলোর ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।

জামালখান ওয়ার্ডের এ কাউন্সিলর বলেন, জেলা প্রশাসক, সিএমপি কমিশনার এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়ে একটি সভা করার পরিকল্পনা আছে। আমাদের টার্গেট ১৫ ফেব্রুয়ারির পর সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরও যেন নিয়মিত বাজারগুলোতে অভিযান চালায়।

এদিকে গতকালের বৈঠকে উপস্থিত প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, পলিথিনের কারণে নগরের পরিবেশ দূষণ ও মাটির গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে কোনো উপায়ে শহরকে পলিথিমুক্ত করতে হবে।

ফইল্ল্যাতলী বাজারে সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পলিথিন যেখানে উৎপাদন হয় সে সব কারখানা ও পলিথিন বিক্রয়ের আড়ৎগুলো থেকে পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০২) অনুযায়ী, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ। আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধানও আছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিনসামগ্রী উৎপাদন করে, তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা এমনকি উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। সেই সঙ্গে পলিথিন বাজারজাত করলে ছয় মাসের জেলসহ ১০ হাজার টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসি গঠনের বিল পাসের জন্য সংসদে উঠছে আজ
পরবর্তী নিবন্ধ৭ লাখ ৪১ হাজার লোককে বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী