নগরের চিহ্নিত জায়গাগুলোতে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

গত ৪ জানুয়ারি ‘ফুট ওভারব্রিজ নেই, তাই যত দুর্ভোগ : ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা ও ওভারপাস থেকে আসছে না সুফল’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, আটটি ফুট ওভারব্রিজের জন্য নগরীর যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র দেড় থেকে দুই কোটি টাকার একটি ফুট ওভারব্রিজের অভাবে ১শ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা এবং ওভারপাসের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী। নগরীর দেওয়ানহাট মোড়ের যান চলাচল গতিশীল করতে প্রায় ৯০ কোটি টাকা খরচ করে ডিটি রোড প্রশস্তকরণ এবং প্রায় ২৫ কোটি টাকা খরচ করে একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়। কিন্তু রাস্তার উপর দিয়ে হাত উঁচিয়ে গাড়ি থামিয়ে মানুষের পারাপার যান চলাচলের গতি সব আয়োজনই ভণ্ডুল করে দিচ্ছে। নগরীর জিইসি মোড়ে দুটি, লালখান বাজারে দুটি, বাদামতলী মোড়ে দুটি এবং ইপিজেড মোড়ে নতুন করে একটি ফুট ওভারব্রিজ জরুরি হয়ে উঠেছে। অবশ্য সিডিএ কর্তৃপক্ষ লালখান বাজারে দুটি এবং ইপিজেড মোড়ে একটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
নগর পরিকল্পনাবিদের মতে, নগরীর কোন্‌ স্থানে মানুষ বেশি চলাচল করে, কোন্‌ স্থান দিয়ে মানুষকে বেশি পারাপার হতে হয়, এসব বিষয় বিবেচনা করে বা জরিপের মাধ্যেমে কর্তৃপক্ষের উচিত পরিকল্পনামাফিক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ বা স্থানান্তর করা। পথচারীদের যাতে উপকারে আসে এসব ফুটওভার ব্রিজ, সে বিষয়ে ভাবতে হবে সবার আগে।
সমপ্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা মতে, ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও রাজধানীর প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। যার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জনগণ মনে করে-

ফুট ওভারব্রিজে ওঠানামা একটি কষ্টকর ব্যাপার এবং তারা খুব কম সময়ে রাস্তা পার হতে চায়।
ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও জনগণকে চলন্ত গাড়ির মাঝ দিয়েই এলোমেলোভাবে রাস্তা পার হতে দেখা যায়। কয়েক মিনিট সময় বাঁচানো বা একটু কষ্ট না করার জন্য তারা নিচ্ছে জীবনের ঝুঁকি। এ ব্যাপারে এসব পথচারীর বক্তব্য হলো, ফুট ওভারব্রিজটা ব্যবহার করা হয়ে ওঠে না, তবে জানি এটা উচিত। কিন্তু পথে চলতে চলতে গাড়িগুলোকে হালকা পাশ কাটিয়ে রাস্তা পার হওয়া যায় বলেই ওভারব্রিজে আর ওঠা হয় না। এ ধরনের নিয়ম লঙ্ঘনে অবশ্য বিরক্ত অনেক সচেতন নাগরিক। তাদেরই একজন বলেন, আমাদের দেশের মানুষ অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসে। এদের সাইকোলজি বোঝা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কী এক অদ্ভুত কারণে আমরা ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও রাস্তার মাঝখান দিয়ে বড় বড় গাড়ির ফাঁক-ফোকর গলে পার হতে পছন্দ করি, ঠিক বুঝি না! এমনকি অনেক বাবা-মাকেও দেখি, তাদের ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ফুট ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে নির্বিকারভাবে রাস্তা পার হচ্ছেন!
এমনভাবে রাস্তা পারাপারে যেমন রয়েছে জীবনের ঝুঁকি, তেমনি এর ফলে অনেক সময় সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটেরও। এমনকি এই বেপরোয়া লোকদের কারণেই রাস্তার গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হয় ট্রাফিক পুলিশদের।
ট্রাফিক পুলিশের বক্তব্যও প্রায় একই ধবনের। তাঁরা বলেন, এদের কথা আর বলবেন না ভাই। ওভারব্রিজ পড়ে আছে ফাঁকা, তবু এরা ব্যস্ত সড়কের মাঝ দিয়েই রাস্তা পার হবে। মানুষগুলোর এমন এলোমেলো চলাচলের জন্য আমরাও ঠিকভাবে কাজটা করতে পারি না। গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণে ঝামেলা হয়। এরা হরহামেশা এসে ব্যস্ত সড়কে ঢুকে পড়ে। সামান্য সিগন্যালের জন্যও অপেক্ষা করে না।
যত্রতত্র রাস্তা পারাপারে জেল-জরিমানার আইন থাকলেও তা কেন প্রয়োগ হচ্ছে না সে বিষয়ে তাঁরা বলেন, কোন লাভ নেই! বহুবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়েছে। অনেককে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন পরে আবার যা তাই! আমরা আসলে নিজের ভালোটা বুঝতে চাই না।’
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা রাস্তার চলন্ত গাড়িগুলোকে পাশ কাটিয়ে রাস্তা পার হতে ৫-৭ মিনিট রাস্তার ধারে অপেক্ষা করতে পারি, কিন্তু ২-৩ মিনিটে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে পারি না। এর জন্য আমাদের মানসিকতাটা পরিবর্তনের প্রয়োজন। সঙ্গে একটু সুব্যবস্থারও।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ নেই। তারা জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করেন। আমাদের এখানেও জেব্রাক্রসিং আছে। তবে অধিকাংশ পথচারী ও চালক জানেন না এর ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। ফুট ওভারব্রিজগুলোর ব্যাপারেও এমনটাই ঘটেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এটি নেই। আবার যেখানে দরকার নেই, সেখানে ফুট ওভারব্রিজ আছে। নগরের চিহ্নিত জায়গাগুলোতে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। এ বিষয়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে। ফুট ওভারব্রিজকে পথচারীদের জন্য নিরাপদ রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে