নগরীর পুকুর ও জলাশয় রক্ষার জন্য কাজ করতে হবে

| শুক্রবার , ৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

নগরে পুকুর বা জলাশয় অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুকুর, খাল, নদী-এসব জলাশয় নগরের প্রাণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জলাশয় না থাকলে নগরের তাপমাত্রা শুধু বৃদ্ধি পায় না, নগরে পানির স্তরও নিচে নেমে যায়। কিন্তু সেই পুকুর ও জলাশয়গুলোকে কিছুতেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই জলাশয় রক্ষায় বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধান জরুরি। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলাশয় সংরক্ষণ আইনসহ অনেকগুলো আইন কোনো না কোনভাবে জলাশয় দূষণ ও দখল প্রতিরোধ, সংরক্ষণ ও রক্ষা বা এ সম্পর্কিত বিষয় উল্লেখ করেছে। কিন্তু এসব আইন বাস্তবায়নও কোনো একক সংস্থার কাছে না থাকায় আইনের বাস্তবায়ন শিথিলভাবে হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কোন বাস্তবায়নই হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া দখল ও দূষণকারীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়শ আইন বাস্তবায়নে বাধার সম্মুখীন হয়।
গতকাল ৩রা নভেম্বর ‘পুকুরটি ভরাটে আবার নতুন আয়োজন, নানা কৌশল’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়, পুকুর ও জলাশয় ভরাট আইন লঙ্ঘন করে নগরীর আগ্রাবাদের রংগীপাড়ায় শতবর্ষী একটি পুকুর ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। ইতোপূর্বে পুকুরটির ভরাট কার্যক্রম ঠেকাতে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়েছিল। ওই সময় আটক করা হয়েছিল কয়েকজনকে। কিন্তু মাত্র মাস কয়েকের মাথায় সব আয়োজন আবারো নতুন করে শুরু হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, খুবই সুকৌশলে পুকুর ভরাটের কার্যক্রম চলে আসছে।এতে উল্লেখ করা হয়, মাস কয়েক আগে বেশ জোরেশোরে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছিল। ওই সময় স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়। এতে কিছুদিনের জন্য পুকুর ভরাট বন্ধ থাকে। সমপ্রতি আবারো জোরেশোরে পুকুরটি ভরাট শুরু হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে পশ্চিম পাড় লাগোয়া অংশে ভরাট কার্যক্রম চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলাশয় কমে যাওয়ার ফলে একদিকে অল্প বৃষ্টিতে যেমন জলাবদ্ধতার সমস্যা আগের তুলনায় আরো বেড়েছে, তেমনি অনেক এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট তৈরি হচ্ছে, ধীরে ধীরে এই সমস্যা বড় আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। জলাশয় ভরাট করে যেসব বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে, সেগুলোও খুব ঝুঁকিপূর্ণ। ধারণা করা হয়, ছয় মাত্রার ভূমিকম্প হলেই এসব ভবন প্রায় সবই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক স্থানে অগ্নিকাণ্ডের সময়ে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সার্বিক বিবেচনায় পুকুর ও দিঘিগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া পরিবেশের জন্য অশনি সংকেত। যারা পুকুর, দিঘি ও জলাশয়গুলো ভরাট কিংবা দখল করেছেন ও ভরাট করছেন, তাদের বেশিরভাগই আসলে লোভ ও লালসা থেকেই করছেন। ফলে পুকুর ভরাটের ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে বেআইনিভাবে এবং কখনো কখনো যোগসাজশে আইনের ফাঁক গলিয়ে। এসব ক্ষেত্রে আইন রক্ষার দায়িত্ব যে সকল প্রতিষ্ঠানের ওপর সে সকল প্রতিষ্ঠানকেও আমরা যথাযথ দায়িত্ব পালনে দেখছি না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রকৃতি প্রদত্ত কিংবা মানুষের সৃষ্টি করা বৈশিষ্ট্যসম্বলিত ও পুরনো পুকুর, দিঘি এবং জলাশয়গুলোকেই বেশি নষ্ট করা হচ্ছে, ভরাট ও দখল করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জরুরি। উন্নয়ন মানে পরিবেশ ধ্বংস নয়, এ ভাবনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। লেকসহ সব জলাশয়ের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নেওয়া হয় না বলেই এসব দখল ও দূষণ হচ্ছে। অথচ মৎস্য চাষ, কৃষিকাজ, বিনোদন, ভূ-গর্ভের পানির স্তর স্বাভাবিক রাখা ইত্যাদি নানা প্রয়োজনে জলাশয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু তাৎক্ষণিকভাবে লাভবান হবার জন্যই এসব জলাশয়গুলো ভরাট করে দখল ও ভবন নির্মাণ চলছে। এ প্রবণতা বন্ধ করা দরকার। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় সাধন করতে হবে। বিশেষ করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনকে সমন্বয়ের মাধ্যমে পুকুর, দিঘি ও জলাশয় রক্ষার জন্য কাজ করতে হবে। তাহলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এর সুফল কিছুটা হলেও আমরা দেখতে পাবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধইউনেসকো দিবস