নগরীতেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ মার্চ, ২০২১ at ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ

দেশে করোনার প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। সে হিসেবে করোনা রোগী শনাক্তের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। তবে দেশে ৮ মার্চ শনাক্ত হলেও চট্টগ্রামে প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৩ এপ্রিল। যদিও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে ২৬ মার্চ থেকে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়।
শুরুতে একটি মাত্র ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হলেও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক), ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষার ল্যাব চালু করা হয়। এরপর বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন পায়। বর্তমানে চট্টগ্রামে ৮টি ল্যাবে (কক্সবাজারসহ ৯টি) নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব ল্যাবে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৮ হাজার ১৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৫২ জনের। শনাক্তের গড় হার ১১.৫৩ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩২ হাজার ৫৯৯ জন। হিসেবে আক্রান্তদের ৯১.৬৯ শতাংশ সেরে উঠেছেন। আর এই সময়ে আক্রান্তদের মাঝে চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে ৩৭৭ জনের। মৃত্যুর হার ১.০৬ শতাংশ।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ হাজার ৬১৫ জন পুরুষ ও ১০ হাজার ৯৩৭ জন নারী। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। মোট আক্রান্তের মাঝে এই বয়সী শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৪৭৩ জন। মোট আক্রান্তের ২৪ শতাংশ ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী। আক্রান্তের তালিকায় এরপর শীর্ষে রয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। মোট আক্রান্তের ২০ শতাংশ এই বয়সী। মোট আক্রান্তের ১৯ শতাংশ ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী। ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী রয়েছেন ১৫.২৭ শতাংশ। আক্রান্তদের মাঝে ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ১৩ শতাংশ। ৭ শতাংশ রয়েছেন ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী।

আক্রান্তদের মাঝে ১০ বছরের কম বয়সী ২.৪১ শতাংশ। মহানগর ও উপজেলা : করোনা সংক্রমিত হিসেবে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত শনাক্তদের মাঝে ৭৯ শতাংশই মহানগরের বাসিন্দা আর ২১ শতাংশ উপজেলার। মোট আক্রান্ত ৩৫ হাজার ৫৫২ জনের মধ্যে মহানগরে শনাক্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৯৫৮ জন। উপজেলায় শনাক্ত ৭ হাজার ৫৯৪ জন।
মৃত্যু : আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ৩৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। মহানগরেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে করোনায়। মোট মৃত্যুর ৩৭৭ জনের মাঝে মহানগরের বাসিন্দা মারা গেছেন ২৭৬ জন। এটি মোট মৃত্যুর ৭৩ শতাংশ। উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ১০১ জনের। শতকরা হিসেবে যা মোট মৃত্যুর ২৭ শতাংশ।
মারা যাওয়াদের মাঝে ৭৯ শতাংশ পঞ্চাশোর্ধ্ব। পঞ্চাশোর্ধ্ব মারা গেছেন ২৯৭ জন। এর মাঝে ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ২০৬ জন। হিসেবে মারা যাওয়াদের ৫৪ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব।
বয়স্ক ব্যক্তিরাই বেশি ঝুঁকিতে মন্তব্য করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেছেন, বয়স্করা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। এছাড়া যারা আগে থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন, তাদের জন্যও ঝুঁকিটা বেশি। অনেকের ক্ষেত্রে বয়স ৪০ পার হতেই বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। করোনায় আক্রান্ত হলে এই বয়সীদের ঝুঁকি কোনো অংশে কম নয়। তাই বয়স্কদের পাশাপাশি তুলনামূলক কম বয়সীদেরও সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে, মোট মৃত্যুর ৭৭ শতাংশই পুরুষ। ২৯১ জন পুরুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। নারী মারা গেছেন ৮৬ জন, যা মোট মৃত্যুর ২৩ শতাংশ।
এদিকে, মাসখানেক আগেও দৈনিক শনাক্তের হার ৫ থেকে ৭ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কিছুদিন ধরে শনাক্তের হার কখনো কখনো ১০ শতাংশও ছাড়িয়েছে। আর বিদেশগামীদের নমুনার সংখ্যা বাদ দিলে দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১৫ শতাংশেরও বেশি। মাস্ক না পরলে ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিপদে যারা করেনি ভয়
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬