নকশা চূড়ান্ত করে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের কাছে জমা

কালুরঘাট সেতু সম্মতি পেলেই পাঠানো হবে একনেকে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

কালুরঘাট সেতুর নকশা চূড়ান্ত করে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের কাছে জমা (কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ড) দিয়েছে ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। জমা দেয়া নকশা কোরিয়া ইডিসিএফের সম্মতি পেলেই ডিপিপি তৈরি করে একনেকে পাঠানো হবে। একনেকে অনুমোদনের পর টেন্ডারে যাবে বলে জানান কালুরঘাট সেতুর ফোকাল পারসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা।

 

তিনি গতকাল আজাদীকে বলেন, দাতা সংস্থা কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন সেতুর নকশা ফাইনাল করে গত সপ্তাহে ইডিসিএফএর কাছে জমা দিয়েছে। এখন এই নকশার উপরে ওদের যদি কোন মতামত থাকে তাহলে তারা আমাদেরকে জানাবেন। ইডিসিএফ এই নকশা ফাইনাল করলে আমরা ডিপিপি করবো। একনেকে ডিপিপি পাস হলে টেন্ডার আহবান করবো।

সেতু সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, প্রথমে পদ্মা সেতুর আদলে কর্ণফুলী নদীর ওপর দ্বিতল ‘কালুরঘাট সেতু’ নির্মাণের একটি নকশা প্রাথমিকভাবে করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটি বাতিল হয়। নতুনভাবে আরেকটি নকশা তৈরি করেছে কোরিয়ার নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন।

নতুন নকশায় একতলা সেতুটি হবে চার লেনের। পাশাপাশি দুই লেন থাকবে ট্রেন চলাচলের জন্য আর অপর দুই লেন থাকবে সড়কপথ। তাতে সম্মতি মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর।

কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) সহজ শর্তে পুরো টাকা বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ হিসেবে দিতে সম্মত আছে। সেতুর নতুন নকশার বিষয়ে ফোকাল পার্সন প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, সেতুর স্থান, দৈর্ঘ্যউচ্চতাসহ সবকিছুই আগের মতো থাকবে।

শুধু চার লেনের হওয়ায় প্রস্থটা বেড়ে গেছে। সেতুটি এখন প্রায় ৬৫ ফুট প্রস্থ হবে। জানা গেছে, নতুন নকশায় সেতু তৈরির প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের মাঝামাঝি অথবা শেষদিকে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৮ সালের শেষদিকে অথবা ২০২৯ সালের প্রথম দিকে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। এদিকে নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় বিদ্যমান কালুরঘাট সেতু মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এই ব্যাপারে কালুরঘাট সেতুর ফোকাল পারসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, বিদ্যমান কালুরঘাট সেতুটি মেরামত উপযোগী করার জন্য বুয়েটকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে পুরো সেতুটি পরীক্ষানিরিক্ষা করে দেখেছেন। তারা তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা। আগামী মার্চে তারা রিপোর্ট দেবে।

তাদের রিপোর্টের উপর সেতুটি মেরামতের জন্য টেন্ডার আহবান করা হবে। বুয়েটের পরামর্শে সেতুটি মেরামত করে কক্সবাজার রুটে আপাতত ট্রেন চালানো হবে ছোট ইঞ্জিন দিয়ে।

উল্লেখ্য কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে বিদ্যমান সেতুটি প্রায় ১০০ বছরের পুরনো। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনা করার জন্য কর্ণফুলী নদীতে ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৩০ সালে ব্রুনিক এ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স নামে একটি সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিজটি নির্মাণ করে। মূলত, ট্রেন চলাচলের জন্য ৭০০ গজ লম্বা সেতুটি ১৯৩০ সালের ৪ জুন উদ্বোধন করা হয়।

১৯৫৮ সালে সব রকম যানবাহন চলাচলের যোগ্য করে ব্রিজটির বর্তমান রূপ দেয়া হয়। ব্রটিশ আমলে নির্মিত ব্রিজটির রয়েছে ছয়টি ব্রিক পিলার, ১২টি স্টিল পিলার ও ১৯টি স্প্যান। জরাজীর্ণ একমুখী সেতুটিতে ট্রেনের পাশাপাশি যানবাহনও চলে।

বোয়ালখালীরাঙ্গুনিয়াপটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের একাংশের নগরের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। একমুখী সেতুর একপাশে গাড়ি উঠলে আরেকপাশ বন্ধ থাকে। ফলে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি চলছে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। এ ছাড়া লক্কড়ঝক্কড় সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই আসামি আবারও রেলের নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক!
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী এখনো ভর্তির বাইরে