বর্তমান বিশ্বে অতি পরিচিত একটি মাদকের নাম সিগারেট। সাধারণত, সিগারেট পানকে ধূমপান এবং যে ধূমপান করে থাকে তাকে ধূমপায়ী বলে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে দিন দিন বেড়ে চলছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। পিছিয়ে নেই আমাদের বাংলাদেশও। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৩ সালে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। ঐ পরিসংখ্যানে বলা হয় যে, বাংলাদেশে তৎকালীন ধূমপায়ীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১৯ লক্ষ। যা একটি অগ্রসর জাতির উন্নতির জন্য হুমকিস্বরূপ। দেখা যায় যে, ৫২% ধূমপায়ী দৈনিক ১২/১৫টা সিগারেট খেয়ে থাকে। যেগুলোর বাজার মূল্য ১০ টাকা থেকে উপরের দিকে। এ হিসাবে একজন ধূমপায়ীর শুধুমাত্র ধূমপানের পিছনে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা খরচ হয়। যা, বাৎসরিক হিসাবে প্রায় ৫০ হাজার টাকার সমান। মনে হতে পারে এই তথ্য অলীক। কিন্ত, চরম বাস্তবতা এটাই। এটা নিছক কোন ব্যক্তিগত মতামত নয় বরং একটি জরিপের ফলাফল।
সিগারেট কী দিয়ে তৈরি হয় এই প্রশ্নের উত্তর বের করতে গেলে দেখা যায়, সিগারেট তৈরি হয় তামাক পাতা থেকে। আর, তামাকের পাতায় থাকে নিকোটিন নামে একটি বিষাক্ত উপাদান। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, একজন ব্যক্তি যখন ধূমপান করে তখন নিকোটিন নামের এই বিষাক্ত পদার্থ সিগারেটের প্রতিটি টানের সাথে সাথে ধূমপায়ীর ফুসফুসে প্রবেশ করে। যা একটা পর্যায়ে ফুসফুসে অসংখ্য কালো দাগের সৃষ্টি করে। যে দাগগুলো থেকে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়। আর এরই ফলে ধূমপায়ী এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অথচ, ধূমপায়ীদের মধ্যে ২% ছাড়া অন্যরা মানতেই নারাজ যে অভ্যাস থেকে শুরু হয়ে আসক্তিতে পরিণত হওয়া এ ধূমপানই একদিন তাদের সর্বনাশের কারণ হয়।
ধূমপানের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে তরুণরা। দেখা যায় যে, ৫৩% ধূমপায়ীর বয়স ৩০ এর নিচে। অতি সমপ্রতি একটি গবেষণা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সমগ্র এশিয়ায় নারী ধূমপায়ীর তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে। যেটি আমাদের জন্য দুঃখের শুধু নয়, বরং অত্যন্ত লজ্জার। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা জানলেও আঁতকে উঠতে হয়। জরিপ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধূমপায়ীর সংখ্যা ৩ : ১ অর্থাৎ ৩৩% শিক্ষার্থীই ধূমপায়ী। যা একটি জাতির জন্য দুশ্চিন্তা শুধু নয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়ও।
এই যে ধূমপান, আমাদেরকে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানতে হবে, নিজে জানার পর অন্যদের জানাতে হবে। সাধারণত, দেখা যায় যে ধূমপায়ীদের মধ্যে বেশির ভাগই সঙ্গদোষ, কৌতূহল এবং মানসিক চাপ থেকে ধূমপান শুরু করে। তাই পিতা-মাতা, শিক্ষক, মালিক অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের অধীনস্থদের ধূমপানের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। আর, যদি কেউ আগে থেকে ধূমপায়ী হয়ে থাকে তাহলে এই আসক্তি থেকে তাকে বের করার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। আসলে একটু আন্তরিক হলেই ধূমপায়ীর জন্য ধূমপান ত্যাগ সম্ভব। যেমনটা বলেছিলেন মার্ক টোয়েন- “পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ ধূমপান ত্যাগ”।