সদরঘাট হতে নগরীর রশিদ বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কটির উন্নয়ন কাজ দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময়েও শেষ হচ্ছে না। প্রথম পর্যায়ে দীর্ঘসূত্রতার কবল থেকে মুক্ত হয়ে তিনটি কালভার্ট নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কার্পেটিং কাজ পুরো শেষ হয়নি। বিশেষ করে একপ্রান্তে বাংলাবাজার হতে রশিদ বিল্ডিং এবং অন্যপ্রান্তে সদরঘাট পুরোনো ভ্যাট অফিসের মুখ হতে কন্টিনেন্টালের জেটি পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা একেবারে বেহাল। ধুলোয় পর্যুদস্ত স্পট দুটি। আশেপাশের গাছপালা ও দোকানপাটে বসেছে ধুলোর আস্তরণ। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বাস্তবায়নকারী সংস্থার গাফেলতির কারণে সড়কটির কার্পেটিং কাজ শেষ হচ্ছে না। এর মাসুল গুণতে হচ্ছে এলাকার লোকজনকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর সদরঘাট মোড় হতে পুরোনো ভ্যাট অফিস, মাঝিরঘাট, বাংলাবাজার হয়ে রশিদ বিল্ডিং পর্যন্ত পুরো সড়কটিতে ধুলোর রাজত্ব। পুরো সড়কটির আশেপাশে শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকজন ধুলোর কারণে বেকায়দায় পড়ছেন। একদিকে শুষ্ক মৌসুম, অন্যদিকে অতিমাত্রায় ধুলোর কারণে আশেপাশের সবুজ গাছপালাও বিবর্ণ হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটির দুইপাশে পদ্মা অয়েল কোম্পানির প্রধান কার্যালয়, বিআইডব্লিউটিসির সদরঘাট টার্মিনাল, সদরঘাট নৌ-থানা, বন্দরের নতুন লাইটারেজ জেটি, পুরোনো কাস্টমস-ভ্যাট-এক্সাইজ অফিস, সদরঘাট মোড় থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত নৌযান থেকে আমদানিকৃত নানান পণ্য খালাসের অসংখ্য জেটি বাদেও বেশ কয়েকটি লবন মিল, কয়েকশত গোডাউন রয়েছে। যে কারণে দিনেরাতে শত শত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি আসা যাওয়া করে সড়কটি দিয়ে।
সদরঘাট এলাকার একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা সদরঘাট, মাঝিরঘাট। এখানে কয়েক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যে কারণে অন্য সড়কগুলোর চেয়েও বেশি ব্যস্ত থাকে সড়কটি। কিন্তু প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেলা করা সম্ভব হচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় ধুলোবালির কারণে শ্বাস নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া ধুলোর কারণে একশ হাতের দূরত্বেও ভালো মতো দেখা যাচ্ছে না।’
অমিয় চক্রবর্তী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘রাস্তার কিছু অংশ কার্পেটিং হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগে তাও নষ্ট হওয়ার পথে। ঘাটগুলোতে প্রতিদিন কয়েকশত ট্রাক-লরি আসা-যাওয়া করে। আবার কিছু অংশে মেকাডাম করে ফেলে রাখার কারণে ধুলো তৈরি হচ্ছে। আবার কার্পেটিং করার জন্য পাথর, ইটের খোয়া খোলা ফেলে রাখা হয়েছে। এসব ইটের খোয়ার উপর ট্রাক চলাচল করতে করতে ধুলো হয়ে যাচ্ছে। এসব ধুলোবালিতে ব্যবহারের কাপড়চোপড় পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। দিনে তিনবার পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বাতাসে ধুলোর কারণে এসপিএম (সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার) ২০০ পিপিএম মাত্রার অধিক হলে তাতে পরিবেশ আইন ভঙ্গ হয়। অর্থাৎ বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রামের অধিক পরিমাণ ধুলোবালি-ময়লার উপস্থিতি পাওয়া গেলে পরিবেশ আইন অনুযায়ী অপরাধ। সদরঘাট-রশিদ বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কে ধুলোর মাত্রা পরীক্ষা করা হবে। যদি মাত্রাতিরিক্ত ধুলোর দূষণ পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহম্মেদের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।