বলা হয়ে থাকে খেলাধুলার সাথে ধুলার একটি সম্পর্ক রয়েছে। তবে সে ধুলা কতটা হলে খেলা যাবে সেটা বোধহয় জানেনা অনেকেই। তাইতো ধুলার মধ্যে খেলতে গিয়ে খেলা শেখাটাতো হচ্ছেইনা উল্টো নানা রোগ শোকে আক্রান্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের অনুশীলন মাঠটি স্টেডিয়ামের একেবারে সামনেই। কিন্তু দেখে মনে হবেনা এটি কোন খেলার মাঠ। কারণ এই মাঠের প্রচন্ড ধুলার কারনে যেখানে পাশ দিয়ে হাঁটা–চলা করা দায় সেখানে খেলাটাতো অসম্ভব। কিন্তু সে অসম্ভবকে সম্ভব করছে কিছু কোমলমতি শিশু। বেশ কয়েকটি ফুটবল এবং ক্রিকেট একাডেমি অনুশীলন করে এই মাঠে। যাদের বেশিরভাগের বয়স ৭/৮ থেকে ১২/১৪ বছরের মধ্যে। বিকেল হতেই মাঠ ভরে যায় এইসব কোমলমতি শিশুদের উপস্থিতিতে। সুন্দর পোশাক পড়ে গাড়ি থেকে নামা পরিপাটি ছেলেটি সন্ধ্যার আগে মাঠ থেকে বের হয় ভিন্ন রূপে। ধুলোমাখা কোন গ্রামীন রাখালের বেশে। এই মাঠে খেলে কতটা ক্রীড়াবিদ হতে পারবে এসব শিশুরা সেটা বলাটা কঠিন। তবে এটা বলা সহজ যে, এই মাঠে খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে শিশুরা।
গতকাল এক সাবেক ফুটবলার বেশ মনযোগ দিয়ে এই শিশুদের অনুশীলন দেখছিলেন। পরে তিনি বললেন যারা এই বাচ্চাদের এ ধরনের মাঠে খেলা শেখাচ্ছে তাদের আগে শাস্তি হওয়া উচিত। তবে আরো মজার বিষয় হচ্ছে প্রশিক্ষকদের মুখে মাস্ক থাকলেও বাচ্চাদের মুখে কোন মাস্ক নেই। ব্যাপারখানা এমন যে, ধুলা খাওয়ার বয়স এখন বাচ্চাদের, কোচদের না। গত কয়দিন ধরে সারা দেশের মত চট্টগ্রামেও শীতের তীব্রতা বেড়েছে। আর এ্ই শীতের মধ্যে প্রচন্ড ধুলার মধ্যে অনুশীলন করছে কোমলমতি শিশুরা। অথচ তাদের অভিভাবকরা নির্বিকার হয়েই যেন উপভোগ করছে সন্তানের ধুলো খাওয়া। সবচাইতে আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে সন্তানকে নিয়ে আসা মা কিংবা বাবার মুখেও আছে মাস্ক। নেই তার সন্তানের মুখে। প্রশ্ন করা হয়েছিল একাধিক অভিভাবককে। তাদের জবাব কি করব? কোথায় আর পাঠাব? একটা মাঠ নেই যেখানে বাচ্চাদের খেলতে পাঠাতে পারি। কিন্তু তারাতো খেলতে চায়। বর্তমান জেলা প্রশাসক এরই মধ্যে আউটার স্টেডিয়ামকে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ গত দুই যুগেও ক্রীড়া সংগঠকরা সে আউটার স্টেডিয়াম সংস্কার করতে পারেনি। উল্টো জঞ্জাল বানিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এই আউটার স্টেডিয়াম সংস্কার হলেও কোমলমতি বাচ্চারা সে মাঠে খেলতে পারবে কিনা সেটা অবশ্য নিশ্চিত নয়। এরই মধ্যে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের অনুশীলন মাঠটিকে নারীদের জন্য সংরক্ষিত করে টার্ফ বসানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে জেলা প্রশাসক। আর তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে যেসব একাডেমি এই মাঠে অনুশীলন করে তাদের ঠিকানা কোথায় হবে সেটা হয়তো সময়ই বলে দেবে। সেটা অবশ্য পরের ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে যে পরিবেশে শিশুরা অনুশীলন করছে তা তাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে এ ধরনের ধুলা বালির মধ্যে অনুশীলন কোমলমতি শিশুদের কাঁশি, শ্বাস কষ্ট, হাঁপানি এমনকি লাঞ্চের মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। অথচ প্রশিক্ষক, অভিভাবক কেউই তা বুঝতে পারছেনা। তাইতো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এই মাঠে কোমলমতি শিশুরা খেলা শিখছে নাকি রোগের আমদানি করছে ?