ধর্ষন : কী ভাবছেন সাধারণ মানুষ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ অক্টোবর, ২০২০ at ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণ থামছে না। কড়া আইন সত্ত্বেও না। ফাঁসির ভয়ও থামাতে পারছে না ধর্ষণ। এমন সময়ে আর চুপ করে থাকা সম্ভব নয়; সাধারণ মানুষের ভাবনা এখন এমন। প্রতিদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব আসামি গ্রেপ্তারও হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতা, সাধারণ মানুষের প্রতিবাদী আন্দোলন কিছুই যেন দমাতে পারছে না ধর্ষক নরপশুদের।
প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

ধর্ষণের খবর শুনলে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে
আবুল কালাম
বাদাম বিক্রেতা

কসবার আবুল কালাম নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় বাদাম বিক্রি করেন। নিজের মেয়ে আছে। তাই এ সময়ের ধর্ষণের খবরগুলো লোক মারফত শুনে ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। বাড়িতে গিয়ে মেয়েকে যে দেখে আসবেন, তারও উপায় নেই। কারণ জীবিকা। তিনি বলেন, কোনো মেয়ে যদি ধর্ষণের শিকার হয়, তাহলে সবাই চুপ থাকি। কারণ ‘এইডা আরেকজনের মাইয়ার ঘটছে। কাল যে আমার মাইয়ার লগেও এমন হইতে পারে, তা আর চিন্তা করি না।’ সবাই ঘরে বসে ভাবি, যাদের মেয়ে এই পৈশাচিকতার শিকার হয়েছে, মাথাব্যথা তাদের। তাই দেশে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। তার মতে একটা খুনের জন্য যেমন খুনিই দায়ী, তেমনি একটা ধর্ষণের জন্য শুধু ধর্ষকই দায়ী।

এগুলান যতো শুনি ততই ভয় কাজ করে
মানিক হোসেন
মৌসুমী ফল বিক্রেতা

নাঙ্গলকোটের মানিক হোসেন মৌসুমী ফল বিক্রেতা; বিয়ে করেননি এখনো। ঘরে মা বোন আছে। তিনি বলেন, ‘এগুলান যতো শুনি ততই ভয় কাজ করে। যারা এসব করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। মানুষ আন্দোলন করছে। কিন্তু কী লাভ হচ্ছে ? কিছুই হচ্ছে না। আবার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের মারামারি হয়। তাহলে এতসব করে কী লাভ?’ তিনি বলেন, সবচেয়ে কষ্ট লাগে ধর্ষণের পর এলাকার কিছু মুরুব্বি মাইয়াডার দোষ খুঁজে, তা প্রচার করে থাকে। তার চরিত্র ভালো ছিল না, এত রাতে মেয়ে হয়ে বাইরে কি করে ইত্যাদি। তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।

ধর্ষণের ঘটনা অনেক বেশি লজ্জার
ইউনূছ খান
ঝাল মুড়ি বিক্রেতা

নগরে ঝাল মুড়ি বিক্রেতা লাকসামের ইউনূছ খানের মেয়ে নেই, একটা ছেলে আছে। তিনি জানান, এমন ঘটনা দেখা অনেক বেশি কষ্টের, অনেক বেশি লজ্জার। আমাদের দেশে যখন এসব হয়, তখন কয়েকদিন মাতামাতি হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে চাপা পড়ে যায়। এসব যেন চাপা না পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে যেন ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয় তার দাবি জানান তিনি। ইউনূছ খান বলেন, আইন না থাকায় ধর্ষকরা ভাবছে আমরা তো পার পেয়ে যাচ্ছি। নারীকে সমাজে হেয় করার জন্য ধর্ষণ করে। ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবার যাতে সমাজে মুখ তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য ধর্ষণ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরার বেলায় এ ঘটনা আরো বেশি ঘটতাছে। কারণ আমরা গরীব। গরীবর বউ হগলের ভাবী।’

শুধু গ্রেপ্তার করলে হবে না শাস্তি চাই
জেসমিন বেগম
শরবত বিক্রেতা

শরবত বিক্রেতা জেসমিন বেগমের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। দুই মেয়ে তার। তিনি বলেন, ধর্ষণ এখন ডাল-ভাতের মত হয়ে উঠেছে। ধর্ষক বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, হুমকি দেয়। জামিনে এসে আবার ধর্ষণ করে। অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা কি বোঝার চেষ্টা করি আমার ঘরেও মেয়ে আছে, একটা বোন আছে? কালকে আমার মেয়েকে যে ধর্ষণ করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা আছে?

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকার পতনের কথা বলে ধর্ষকদের বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধইঞ্জিনিয়ার মোশাররফকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি