ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মত অপরাধ বন্ধ করতে, ভিকটিমদের সুবিচার প্রাপ্তি ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে এবং দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের উদ্যোগ দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, মরক্কো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের ভয়ঙ্কর সব ঘটনার খবরে মানুষ অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছে, তারা বিচার চাইছে, যৌন নিপীড়ন বন্ধের জন্য আরও উদ্যোগ চাইছে। সেই ক্ষোভ আমারও, যারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এবং তাদের জন্য যারা বিচারের দাবি জানাচ্ছেন, সবার প্রতি আমি সংহতি জানাই। কিন্তু অনেক জায়গায় যৌন অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি উঠেছে, কোথাও কোথাও আইন সংশোধন করে ইতোমধ্যে নির্মম ও অমানবিক ওই শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়েছে, সে কারণে আমি উদ্বিগ্ন। খবর বিডিনিউজের।
নাইজেরিয়ার কাদুনা অঙ্গরাজ্যে ১৪ বছরের কম বয়সের শিশু ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাকে খোজা করার নতুন একটি আইন চালু হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। আর বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে গত মঙ্গলবার অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। পাকিস্তানেও ধর্ষণের শাস্তিতে প্রকাশ্যে ফাঁসি ও খোজা করার আইন করার দাবি উঠেছে। এ অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার দাবি এসেছে আরও অনেক দেশে।
এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে হাই কমিশনার বলেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার দাবির পেছনে মূল কারণ হল, ধর্ষণ যাতে বন্ধ হয়। কিন্তু বাস্তবতা হল, অন্য শাস্তির বদলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ধর্ষণ বন্ধে বেশি কার্যকর, এমন কোনো প্রমাণ কোথাও নেই। বরং শাস্তির মাত্রার বদলে শাস্তির নিশ্চয়তা যে অপরাধ কমিয়ে আনতে পারে, তার যথেষ্ট প্রমাণ আমরা দেখতে পাই। মিশেল ব্যাচেলে বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হল, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ভিকটিমরা শুরুতেই আইনের আশ্রয় পান না। সেটা কখনও সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে, কখনও আরও ক্ষতির আশঙ্কায়, কখনও সমাজের গভীরে প্রোথিত লিঙ্গ বৈষম্য আর ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার কারণে। পুলিশ বা বিচার ব্যবস্থায় নিয়োজিতদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব এবং আইনি দুর্বলতা ও ভিকটিমের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় বিধান না থাকাও অনেক ক্ষেত্রে এর কারণ। এইসব সমস্যা এবং সুবিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও অসংখ্য যে বাধাগুলো রয়েছে, তার কোনোটিরই সমাধান মৃত্যুদণ্ড কিংবা খোজা করার আইন দিয়ে হবে না। ধর্ষণ বন্ধেও এসব বিধান কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। বরং মৃত্যুদণ্ডের বিধান যে ক্রমাগতভাবে দরিদ্র আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আরও ‘বৈষম্য’ তৈরি করবে এবং তার ফলে অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকার লক্সঘন যে আরও বাড়বে, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন মিশেল ব্যাচেলে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সকল রাষ্ট্রের প্রতি আমি আহ্বান জানাই, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মত অপরাধের কারণে যে দুর্দশা, তা বন্ধ করতে ভিকটিমের জন্য সহায়ক দৃষ্টিভঙ্গি নিন। এইসব অপরাধ বন্ধের কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং এ ধরনের ঘটনা সামাল দেওয়ার জন্য আইন-শৃক্সখলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্মাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়াও জরুরি। এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধ যারা করে, তাদের শাস্তি দিতে গিয়ে নিষ্ঠুর আইন করার মধ্য দিয়ে আমরা মানবাধিকার লক্সঘনের আরও পথ তৈরি করে দিতে পারি না।