ধর্ষণে বাধা, তরুণীকে হত্যা

দেখে ফেলায় খালা-খালুকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা চন্দনাইশের ঘটনা, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশে গভীর রাতে কলেজছাত্রী ভাগ্নিকে (খালাতো বোনের মেয়ে) ধর্ষণ করতে না পেরে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে নাজিম উদ্দিন (২৮) নামে এক যুবক। এর পর নিজ খালা ও খালুকেও ছুরিকাঘাত ও জবাই করে হত্যার চেষ্টা চালায় নাজিম। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে চন্দনাইশ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ গাছবাড়িয়া নয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তরুণীর নাম আরজু আক্তার (২০)। গুরুতর আহত অবস্থায় তার নানা আবদুল হাকিম (৭৫) ও নানি ফরিদা বেগমকে (৬০) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি করা হয়েছে। ফরিদা বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের এলাহাবাদ সওদাগরপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের মেয়ে আরজু আকতার ঈদ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বেড়াতে এসেছিলেন চন্দনাইশ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকায় তার নানাবাড়িতে। এদিকে গত শুক্রবার ঈদ উপলক্ষে খালার বাড়িতে বেড়াতে আসেন নাজিম উদ্দিন (ফরিদা বেগমের বোনের ছেলে)। সেখানে নাজিম ও আরজুর দেখা হয়। চানাস্তা খেয়ে নাজিম ওইদিন চলে যান। নানাবাড়িতে থেকে যান আরজু। ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে খালার বাড়িতে আবার আসেন নাজিম। এ সময় তিনি খালাখালুকে ঘুম থেকে ডেকে ঘরের দরজা খোলান এবং রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। সেমিপাকা ঘরের মাঝের রুমে নানির সাথে ঘুমিয়েছিলেন আরজু। নানার সাথে শুয়েছিলেন নাজিম উদ্দিন। পাশে নতুন দ্বিতল পাকা বাড়িতে থাকেন হাকিমফরিদার দুই ছেলের স্ত্রী ও নাতিনাতনিরা। তাদের দুই ছেলে প্রবাসী। ওইদিন রাত ২টার দিকে আরজু ঘরের সাথে লাগোয়া বাথরুমে গেলে ওত পেতে থাকা নাজিম আরজুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মুখে কাপড় গুঁজে ও ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ বাথরুমেই রেখে দেন। এ সময় আরজুর নানানানি জেগে যান। তারা ঘটনাটি দেখে ফেললে নাজিম তার বৃদ্ধ খালা ফরিদা বেগম ও খালু আবদুল হাকিমকেও ছুরিকাঘাত করেন এবং জবাই করে হত্যার চেষ্টা চালান। এ সময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়দের ঘুম ভেঙে গেলে কয়েকজন ছুটে আসে। নাজিম পালিয়ে যান। পরে এলাকাবাসী গুরুতর আহত আবদুল হাকিম ও ফরিদা বেগমকে উদ্ধার করে প্রথমে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে যান। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ফরিদা বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

নিহতের মামি এবং আহত আবদুল হাকিম ও ফরিদা বেগমের পুত্রবধূ রিমু আকতার জানান, আরজু পটিয়া সরকারি কলেজে পড়ে এবং গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছিল। নানাবাড়িতে আসার পর গত পরশু পাত্রপক্ষ তাকে দেখে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবারও আরেক পাত্রপক্ষকে দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু নাজিম বাড়িতে এসে আরজুকে হত্যা করে এবং আমার শ্বশুরশ্বাশুড়িকে ছুরিকাঘাত ও জবাইয়ের চেষ্টা চালিয়ে পালিয়ে যায়।

তিনি জানান, নাজিম উদ্দিনেরও বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আগামী সপ্তাহে তার বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নাজিম পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার চরখাগরিয়া এলাকার মৃত ছৈয়দ আহমদের ছেলে। তার খালার বাড়ির পাশে তার বোনের শ্বশুরবাড়ি। সে সূত্রে মাঝে মাঝে খালার বাড়ি ও বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসত। সে চট্টগ্রাম শহরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে। ঘটনার ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চমেক হাসপাতালে ফরিদা বেগমের অপারেশন হয়েছে। এখনো তার জ্ঞান ফিরেনি বলে জানান রিমু আকতার।

চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নুরুজ্জামান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে নাজিম উদ্দিন তার ভাগ্নিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে বিষয়টি তার খালাখালু দেখে ফেললে তাদেরও ছুরিকাঘাত ও জবাই করে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে পালিয়ে যায়। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নাজিমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) সোহানুর রহমান সোহাগ গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি আহত আবদুল হাকিমের পরিবারের সাথে কথা বলেন। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং নাজিমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আরও ১৬ কোটি টাকা অবরুদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত