রিকশার হুডে আঁকা ময়ুর ও সাপের ছবি চিনিয়ে দিল কে এই রিকশার চালক। আর চালক শনাক্তের পর পুলিশ জানতে পারে সেই রিকশার চালক ওসমান হারুন মিন্টুই সাত বছরের শিশু সুরমার ধর্ষক ও খুনি। বেশভূষা পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। ধর্ষণ ও হত্যার পর লুঙ্গি ছেড়ে প্যান্ট পরে চলাফেরা করত, রেখেছিল মুখ ভর্তি দাড়িও। মিন্টুর এমন ছদ্মবেশ ধারণে চিনতে কষ্ট হচ্ছিল তার চেনা মানুষদেরও। শুধু তাই নয় নিজেকে আড়াল করতে সে সাইফুল নামে তার পরিচিত একজনকে ঘটনায় ফাঁসানোর চেষ্টা করে। তাতেও সফল হয়নি। ঘটনার ২৪ দিন পর গত বুধবার (১২ অক্টোবর) নগরীর বেপারি পাড়া এলাকা থেকে বন্দর থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় মিন্টু। মিন্টু নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার মৃত আজম আলীর ছেলে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, নিহত শিশু সুরমার পিতা একজন রিকশা চালক এবং মা বাসায় বুয়ার কাজ করেন। তারা হালিশহর এলাকায় ভাড়া থাকলেও শিশুটি বড়পোল এলাকায় ভিক্ষা করতো। ১৭ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৯টায় হালিশহর স্বপ্ন সুপার শপের সামনে ভিক্ষার জন্য দাঁড়িয়েছিল সুরমা। আর তখনই তাকে বিরিয়ানি খাওয়াবে বলে রিকশায় তুলে নিয়ে বড়পোল মোড়ের ফুটপাত থেকে ২০ টাকা দামের বিরিয়ানি কিনে খাওয়ায়। এরপর শিশুটিকে পোর্ট কলোনি সংলগ্ন ৮ নম্বর সড়কের মুখে পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে ধর্ষণ শেষে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে।
বন্দর থানা সূত্র জানায়, শিশু সুরমাকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করতে ঘটনার পরপরই বন্দর থানা পুলিশের একটি টিম মাঠে নামে। সংগ্রহ করা হয় হালিশহর থানা, বন্দর থানা এবং ডবলমুরিং মডেল থানার একাধিক সিসি টিভি ফুটেজ। এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনাকারী টিমের অন্যতম সদস্য বন্দর থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই কিশোর মজুমদার আজাদীকে বলেন, ভিডিও ফুটেজে একটি রিকশার ছবি পেয়েছিলাম। রিকশার হুডে করা আর্ট নিয়ে আমরা খোঁজ খবর নিতে থাকি। ধর্ষক ওসমান হারুন মিন্টু যে রিকশাটি চালাতো তার মধ্যে একটি ময়ুর ও সাপ আঁকা ছিল। এ ধরনের রিকশাচিত্র যে করেছে তাকে আমরা পশ্চিম মাদার বাড়ি গিয়ে শনাক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন সে বলে, এ ধরনের চিত্র আঁকা রিকশা আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় ২৫ নম্বর রোডে কামালের গ্যারেজে ডেলিভারি দেয় সে। পরবর্তীতে কামাল ও আর্ট করা ব্যক্তিকে মুখোমুখি করে রিকশাটির চালক নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে গ্যারেজ মালিক কামালের মাধ্যমে অভিযুক্ত ওসমান হারুন মিন্টুকে শনাক্ত করা হয়। পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পেতে সে আগে যে মালিকের রিকশা চালাত, সেটি বাদ দিয়ে অন্য গ্যারেজের রিকশা চালানো শুরু করে। তাছাড়া সে নিজেকে গোপনে রাখতে এক মাসে তিনটি বাসা বদল করেছিল।
এদিকে মেয়ের হত্যাকারী গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনে থানায় ছুটে আসেন সুরমার বাবা, মা ও আত্মীয়রা। তারা হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করেন।