ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করতে দেব না

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

| বুধবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

একাত্তরের পরাজিত শক্তির একটি অংশ ‘মনগড়া বক্তব্য দিয়ে’ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশে ‘ধর্মের নামে কোনো বিভেদ’ সৃষ্টি করতে তিনি দেবেন না। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ৪৯তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বিরোধিতায় মৌলবাদী একটি গোষ্ঠীর সামপ্রতিক তৎপরতার মধ্যে সরকারপ্রধানের এই স্পষ্ট ভাষণ এল। খবর বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। যার যার ধর্ম পালনের অধিকার এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আছে। এ বাংলাদেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ শাহজালাল, শাহ পরাণ, শাহ মখদুম, খানজাহান আলীর বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ শেখ মুজিবের বাংলাদেশ; সাড়ে ষোল কোটি বাঙালির বাংলাদেশ। এ দেশ সকলের। এ দেশে ধর্মের নামে কোনো ধরনের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে আমরা দেব না। ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে এ দেশের মানুষ প্রগতি, অগ্রগতি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবেন।
পরাজিত শক্তির দোসররা ধৃষ্টতা দেখা”েছ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বর্বর বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের ইতিহাস প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে শুধু একজন ব্যক্তি মুজিবের মহাপ্রয়াণ হয়নি। তাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস চালানো হয়। বাঙালি জাতির যে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল, তা স্তব্ধ করে দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী জাতির পিতা ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা এবং প্রসারে যা করেছেন, ইসলামের নামে মুখোশধারী সরকারগুলো তা কখনই করেনি। পরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার এবং প্রসারে যত কাজ হয়েছে, অতীতে কোনো সরকারই তা করেনি বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে বলেছিলেন ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করতে। কিন’ পরাজিত শক্তির দোসররা দেশকে আবার ৫০ বছর আগের অবস’ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক মদদে সরকারকে ভ্রূকুটি দেখানোর পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখা”েছ।
মাথা উঁচু করে চলার প্রত্যয় : প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের শুরুতেই দেশের সকল নাগরিককে বিজয় দিবসের শুভে”ছা জানান। তিনি বলেন, ইতিহাসের এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে আজ আমরা বিজয় দিবস-২০২০ উদযাপন করতে যা”িছ। এ বছর আমরা আমাদের মহান নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। কয়েকদিন পর আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পদার্পণ করব।
তিনি বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করে সমগ্র বিশ্বের বুকে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে দেশের দুই প্রান্তকে সংযুক্ত করেছে।
জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বুকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয় নিয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে অবস’ানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আমি বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভে”ছা জানা”িছ।
সরকারপ্রধান তার ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানান।
লাল-সবুজের অসম্মান হতে দিও না : জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনের মধ্যে যখন তার ভাস্কর্য স’াপনের বিরোধিতা হ”েছ, তখন মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় অসামপ্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয় আবার উ”চারিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে।
তিনি বলেন, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে তাই আসুন, আবারও আমরা শপথ নেই, আমরা যেন লাখো শহীদের রক্তের ঋণ ভুলে না যাই। আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধের অসামপ্রদায়িক চেতনা ভূলুণ্ঠিত হতে না দিই। যুবশক্তি, তরুণ সমাজ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে অনুরোধ, তোমরা তোমাদের পূর্বসূরীদের আত্মোৎসর্গের কথা কখনোই ভুলে যেও না। তাদের উপহার দেওয়া লাল-সবুজ পতাকার অসম্মান হতে দিও না। নতুন প্রজন্মকে এই বিজয় দিবসে যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে পূর্বপুরুষের বিজয়-নিশান সমুন্নত রাখার শপথ নিতে বলেন শেখ হাসিনা।
প্রতিটি মানুষের জীবনই যে ‘মূল্যবান’, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কোনো অবহেলায় একজন মানুষেরও মৃত্যু কাম্য নয়। তাই, আমি সকলকে স্বাস’্যবিধি মেনে বিজয় দিবস উদযাপনসহ যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করার অনুরোধ জানা”িছ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপঞ্চাশে বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধআত্মসমর্পণের পর কারাগারে দুই সিএন্ডএফ মালিক