সহীহ মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে, ‘মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, রোজাদারদের জন্য দুটি খুশি; একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়’। সারা দিন রোজা পালন শেষে সূর্য ডোবার সময় ইফতার করেন রোজাদাররা। ইফতার অনেক ফজিলতপূর্ণ। আবার ইফতার করানোও পুণ্যের কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)। ইফতার করানো সাওয়াব, তাই তো সেই ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে অন্য রোজাদারকে ইফতার করাতে কার্পণ্য করেন না মুসলিমরা। মুসল্লি এবং পথচারিদের সুবিধার্থে প্রতিবছর রমজানে বিভিন্ন মসজিদে আয়োজন করা হয় ইফতারের। যেখানে ধনী–গরিব সবাই এক কাতারে বসে ইফতার করেন। যুগ যুগ ধরে এ আয়োজন যেন ইসলামী ঐতিহ্যের নির্দশন বহন করে। গত দুই যুগ ধরে প্রতি রমজানে নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদেও আয়োজন করা হয় ইফতারের। গতকাল প্রথম রমজানে যেখানে ইফতার করেন দুই হাজার রোজাদার। মসজিদের খতিব মাওলানা ছাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবেরী আল–মাদানী–এর তত্ত্বাবধানে এ ইফতার আয়োজন করা হয়। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে এ মসজিদে খতিব হিসেবে যোগ দেন তিনি। এরপর মক্কা–মদিনার আদলে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে রোজাদারদের জন্য ইফতার আয়োজনের পরিকল্পনা করেন তিনি। এরপর ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তার চেষ্টায় ছোট পরিসরে রোজাদারদের জন্য আয়োজন করা হয় ইফতারের। যা ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে আরো বৃহৎ আকারে রূপ নেয়। সেই থেকে প্রতি রমজানে হাজারের অধিক লোক প্রতিদিন এখানে ইফতার করেন। সর্বশেষ গত কয়েক বছর ধরে প্রথম রমজান থেকে আয়োজন করা হয় দুই হাজার লোকের ইফতার। যা শেষ দিকে এসে বেড়ে যায়। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া এ আয়োজন এবার ২৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে মোগলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি হিসেবে নির্মাণ করা হয় আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ। গতকাল বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সামনে ইফতারের প্লেট নিয়ে সারিবদ্ধভাবে এক কাতারে বসেছেন রোজাদাররা। বড় থালায় ছয়জন একসঙ্গেও বসেছেন। ধনী–গরিব কোনো ভেদাভেদ নেই। সবার প্লেটে একই ইফতার; খেজুর, ছোলা, চমুচা, পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, মুড়ি, অন্তন ও জিলাপি। সাথে ছিল শরবত।
ইফতারের আগে রোজার ফজিলত নিয়ে আলোচনা ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে অংশ নিয়ে মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের আকুতি করতে দেখা গেছে অনেকে।
আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিবের একান্ত সহকারী মো. হাছান মুরাদ আজাদীকে বলেন, খতিব হুজুরের তত্ত্বাবধানে সামগ্রিক আয়োজন চলছে। আজ (গতকাল) দুই হাজার রোজাদার ইফতারে অংশ নিয়েছেন। এবারও পুরো রমজান মাস জুড়ে আয়োজন চলবে।
ইফতারে অংশ নেয়া ফজল আহমেদ নামে একজন জানান, তিনি রিকশাচালক। রোজা রেখে কষ্টদায়ক তাই দিনভর রিকশা চালাননি। আসরের নামাজের পর রিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন। টাইগারপাস থেকে ভাড়া নিয়ে এসেছেন আন্দরকিল্লা। এরপর ইফতারে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার পরিবার গ্রামে থাকে। প্রতিবছর প্রায় রমজানে আন্দরকিল্লা মসজিদে ইফতার করি।
ফজল আহমেদ–এর পাশেই বসেছেন শিহাব নামে এক দোকানদার। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল আমি। বাসায় ভালো আয়োজন হয়। এরপরও মসজিদে সবার সঙ্গে বসে ইফতার করার মধ্যে আলাদা তৃপ্তি পাই। ইফতার শেষে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারি। নামাজে যেমন ধনী–গরিব ভেদভেদ থাকে না, এখানে ইফতার আয়োজনেও ভেদাভেদ নেই। এটা ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচায়ক, যা আমাকে আনন্দ দেয়।
এদিকে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সকাল থেকেই শুরু হয় ইফতার আয়োজনের কর্মযজ্ঞ। ১২ জন বাবুর্চি পুরো রমজান মাসজুড়ে ইফতার তৈরিতে কাজ করবেন। গতকালের ন্যায় ইফতার সরবরাহে কাজ করবেন ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক।