দ্রব্যমূল্য নিয়ে টেনশনে মানুষ

ছোলা খেজুর চিড়াসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে

জাহেদুল কবির | সোমবার , ১১ মার্চ, ২০২৪ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

রমজান শুরু হতে পারে আগামীকাল থেকে। রমজান এলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নিত্যপণ্যের দাম কমানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ঘটে উল্টো ঘটনা। রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারের চাহিদাকে পুুঁজি করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ক্রেতাদের পকেট কাটতে ব্যস্ত থাকেন। রমজানে বাড়তি মূল্যের কারণে টেনশনে আছে সীমিত আয়ের মানুষ। রমজানের অত্যাবশকীয় প্রত্যেকটি পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর রমজানের অত্যাবশকীয় পণ্যের মধ্যে ছোলার আমদানি ব্যয় বেড়েছে। গত বছর ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ ছোলা আসে। পুরো বাজার ভারতীয় ছোলায় সয়লাব হয়ে যায়। এছাড়া উচ্চ শুল্কের কারণে খেঁজুরের বাজার লাগামহীন। অপরদিকে চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও চিড়ার বাজারও বাড়তি। অপরদিকে মাছমাংস ও মুরগির বাজারেও একই অবস্থা। বাজারে ৫০৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এর মধ্যে নতুন করে বাড়ছে আলুর দাম। বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, রমজান মাসকে সংযমের মাস বলা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে এই মাসটি টাকা উপার্জনের জন্য খুবই ভালো একটি মাস। মুসলিম সম্প্রদায়ের রমজান ছাড়াও ঈদের জামাকাপড়সহ আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। এতে এই মাসে আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অন্তত রমজান মাসে হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আরো বেশি তৎপর হতে হবে।

নগরীর কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ টাকায়। অথচ গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। সাদা মটর কেজি ৮০ টাকা, মশুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, খেসারি ডালের কেজি ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। গত বছর দাম ছিল ৫০ টাকা। সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৯ টাকা ও খেজুর মানভেদে ২৯০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে খেজুর পাওয়া যেত।

অপরদিকে বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০টা থেকে ৮৫০ টাকা, পাঙ্গাস মাছ ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা এবং রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে আমাদের দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। কোনো ব্যবসায়ী তো আর লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবেন না। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনেন। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই।

দামের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে দামপাড়া এলাকার খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ রানা বলেন, আমরা পাইকারি বাজার দুয়েক বস্তা পণ্য এনে বিক্রি করি। ক্রয়মূল্যের তুলনায় কেজিতে ১২ টাকা লাভ করে পণ্য বিক্রি করে থাকি। এখন প্রতিযোগিতামূলক বাজার কোনো খুচরা দোকানদার চাইলেও বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন না। কারণ ক্রেতারা এখন বেশি সচেতন।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থাপনার প্রতি পদে পদে রয়েছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। এসব সিন্ডিকেট সরকারকেও জিম্মি করে ফেলে। যেমন খাতুনগঞ্জে প্রশাসন অভিযান চালাতে গেলে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। এছাড়া অনেক সময় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। রমজান মাসে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হওয়ার পরও দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ীর দোকান ও গুদামে গত বছরের অবিক্রিত পণ্যও রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোজায় স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হাই কোর্টে স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধ১৬০০ টাকার এলাচ বিক্রি হচ্ছিল ৩১০০ টাকায়