দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : টিসিবি’র কার্যক্রম চালু রাখতেই হবে

| রবিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় মানুষের আগ্রহ বাড়ছে বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)’র পণ্যের ওপর। নায্যমূল্যে পণ্য পেতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টিসিবি’র ট্রাক সেলের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণেই নিম্নবিত্তের সঙ্গে মধ্যবিত্তরাও এই লাইনে শামিল হচ্ছেন। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের তাল মিলাতে না পেরে টিসিবির পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ মধ্যবিত্তদের। অন্যদিকে প্রতারকচক্র সংঘবদ্ধভাবে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে একাধিকবার পণ্য কিনে খোলা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতার এই মূহূর্তে চট্টগ্রামে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার খবরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে জনমনে। দৈনিক আজাদীতে গতকাল প্রকাশিত খবরে জানা যায়, শনিবার থেকে চট্টগ্রামে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। চাল-তেলসহ প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের কিছুটা স্বস্তি ছিল টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্যে। এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে চরম বিপাকে পড়বেন তারা।
সমপ্রতি প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় টিসিবির ট্রাক সেলে ক্রেতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে বাজারের চেয়ে তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় এতদিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনেছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। এরই মাঝে হঠাৎ করে আজ শনিবার থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই ব্যাপারে টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের সহকারী কার্যনিবাহী হাবিবুর রহমান আজাদীকে জানান, শনিবার থেকে আমাদের ট্রাক সেল কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে। পরবর্তী কার্যক্রম কবে শুরু হবে এই ব্যাপারে এখানো কোনো নির্দেশনা আমরা পায়নি। তবে খুব বেশিদিন বন্ধ থাকবে না। মাসের শেষের দিকে আমাদের ব্যাংকের হিসেব-নিকেশ ঠিক করতে হয়। সব মিলে সপ্তাহখানেক টিসিবির ভোগ্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এরপর আবার শুরু হবে। প্রতি মাসের শেষে এবং মাসের শুরুর কয়েকদিন টিসিবির কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
বাজারে যখন তখন দাম চড়ে এমন নিত্যপণ্যের মধ্যে তেল, পেঁয়াজ, ডাল ও চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে আসছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। সংসারে অপরিহার্য এসব পণ্য বাজারের চেয়ে কম মূল্যে কিনতে অনেকেরই ভরসা টিসিবির ট্রাকসেল। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি আগে বাজার চাহিদার মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ সরবরাহ করলেও এখন সেটি গিয়ে ঠেকেছে ১২ শতাংশে। সক্ষমতা বাড়ানো হলে টিসিবি বাজারের চেয়ে কম দামে আরো বেশি নিত্যপণ্য বিক্রি করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাজারে ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া অতি মুনাফা করাও বন্ধ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো টিসিবির ট্রাক সেল। তবে এটা দিয়ে পুরো দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ টিসিবির যে সক্ষমতা আছে তা দিয়ে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ক্ষুদ্র একটা অংশ পূরণ করা সম্ভব। যারা টিসিবির পণ্য কিনতে পারবেন তারাই সুবিধা পাবেন। তবে টিসিবির কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। এজন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে, যাতে টিসিবি প্রয়োজনে আমদানি ও অভ্যন্তরীণ পর্যায় থেকে পণ্য সরবরাহ করে ভবিষ্যতে এর কার্যক্রম যেন বাড়িয়ে করতে পারে।
আসলে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে আয় বাড়ছে না। ফলে টিসিবির লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। মধ্যবিত্তও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। টিসিবির লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া তাদের উপায় নেই। কিন্তু সেখানেও পর্যাপ্ত পণ্য না থাকায় তারা হতাশ হচ্ছেন। যেখানে টিসিবি’র কার্যক্রম বাড়ানোর দাবি উঠছে, সেই জায়গায় কার্যত্রম বন্ধ করে দেওয়া স্বস্তির কাজ হতে পারে না। এ কার্যত্রম আবার দ্রুত চালু করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধসৌদি আরবের জাতীয় দিবস