দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ

তেলের ওয়াগন লাইনচ্যুত, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ডিজি কামরুল

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর হালিশহরে চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) তেলবাহী ট্রেনের ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান। এ সময় রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান আরো বলেন, রেল দুর্ঘটনারোধে সকলকে সতর্ক হতে হবে।

যদি কেউ দায়িত্ব অবহেলা করে এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল শুক্রবার সকালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে দুর্ঘটনাস্থল সিজিপিওয়াই পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এই নির্দেশ দেন।

গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা ৫০ মিনিটে পদ্মামেঘনা ও যমুনা ডিপো থেকে ওয়াগনে তেল লোড করার পর ইয়ার্ডে প্রবেশের সময় তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। সিজিপিওয়াই এলাকা পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান। ডিজি প্রকৌশলী কামরুল আহসান বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

আজকের (শুক্রবার) মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট দিতে হবে জিএম সাহেবের কাছে। তদন্ত কমিটি যাদের দোষী সাব্যস্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে আগামীকালই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য সব বিভাগীয় প্রধানদের বলেছি।

বুধবার রেলের তেলবাহী তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হলে সেখান থেকে দুটি ওয়াগনের তেল বাইরে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন রেলের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা। রেলের ওয়াগন থেকে ছড়িয়ে পড়া তেল পাশের গুপ্ত খালমহেশখাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা।

ছড়িয়ে পড়া তেল পরিবেশের ক্ষতির আশংকার কথা জানিয়েছে রেলওয়ে মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, পরিবেশের উপর একটা বিরূপ প্রভাব তো পড়বেই। আমরা এ জিনিসটাও দেখব।

এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।

এ সময় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ রেলের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় নগরীর হালিশহর এলাকায় রেলওয়ের চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) একটি তেলবাহী ট্রেনের ১৬টি বগির মধ্যে তিনটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। এর মধ্যে দুটি ওয়াগন থেকে প্রায় ৩০ হাজার লিটারের বেশি তেল ড্রেন হয়ে গুপ্তখালমহেশখালে গিয়ে পড়ে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৯ লাখ টাকা বলে দাবি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়া বিপুল পরিমাণ তেল মহেশখালের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

এই ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মফিদুল আলম আজাদীকে বলেন, রেলওয়ের তেলের ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে তেল খালের যেসব স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে সে সব এলাকার নমুন আমরা সংগ্রহ করেছি। আমার ল্যাবে পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে ৫ দিন লাগবে। তখন বুঝা যাবে নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ফলে কি পরিমণের ক্ষতি হবে। তবে প্রাথমিকভাবে বলতে পারি এতো গুলো তেল খালের পানিতে ছড়িয়ে পড়ার ফলে পরিবেশের জন্য অনেকটা ক্ষতিকর হবে। জীব বৈচিত্র্যের উপর প্রভাব পড়বে।

এদিকে ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক বিন ইমরানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আজাদীকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা দ্রুত দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেব। তবে লাইনচ্যুত ওয়াগানের তেল নদীতে যায়নি বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, টিভি চ্যানেলগুলোতে যেভাবে তেল পড়ার দৃশ্য দেখানো হচ্ছেআসলে সেই ভাবে তেল পড়েনি। দুর্ঘটনার পরপর এভাবে তেল পড়লেও সাথে সাথে বন্ধ করা হয়েছে। তবে কি পরিমাণে তেল পড়েছে এবং কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মনির হোসেন জানান, রেলওয়ের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে লাইনচ্যুত হওয়া তেলবাহী ওয়াগন থেকে ছিটকে পড়া তেল সিজিপিওয়াই খাল, গুপ্তা খাল ও মহেশ খাল দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। মহেশখাল যেখানে কর্ণফুলী নদীতে মিশেছে, সেখানকার স্লুইস গেটটি বুধবার থেকে বন্ধ ছিল। আমরা গেটের ভেতরের দিকে খাল থেকে নমুনা নিয়েছি একাধিক।

খালের পানিতে ভালো পরিমাণে তেলের উপস্থিতি আছে। গেটের অপর পাশে নদীর পানির নমুনাও নিয়েছি। নমুনা পরীক্ষার পর বলা যাবে তেল নদীতে ছড়িয়েছে কি না। তবে খালি চোখে নদীর পানিতে খুব অল্প পরিমাণ তেল দেখা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএখন আমেরিকাও পাশে নেই, বিএনপি যাবে কোথায় : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে আগুনে নিঃস্ব সাত জেলে পরিবার