দৈনিক আজাদী এক বিশ্বস্ততার নাম

সুপ্রতিম বড়ুয়া

| বৃহস্পতিবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সাড়ে চারশো কোটি বছরের ইতিহাসে পৃথিবী কখনো একইরকম থাকেনি। থাকা সম্ভব ছিল না। বদল অবশ্যম্ভাবী। বদলের ধারাপাত মেনেই কালের বিবর্তনে পরিবর্তন ঘটেছে দৈনিক আজাদী পত্রিকার বিন্যাসে। ১৯৫৯ সালে যার যাত্রা দৈনিক পত্রিকা হিসেবে, তার প্রায় ছয় দশক কেটেছে। ভালো কিংবা খারাপ, আলো অথবা অন্ধকার, দৈনিক আজাদী সূর্য হয়ে থেকেছে গণমানুষের কাছে সত্য ও সাহসিকতার সম্মিলনে তৈরি হওয়া আদর্শিক ভিত্তির উপর ভর দিয়ে প্রথম দিন থেকে পত্রিকাটি পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় কলম চালিয়েছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সময়ে এসে, একবিংশ শতাব্দীতে কলম পরিণত হয়েছে কি-বোর্ডে, কিন্তু মিডিয়ার আকাশে দৈনিক আজাদী নামক সূর্যের আঁচ কমেনি এতটুকু। একটা সময় সকাল হলে গৃহকর্তা অপেক্ষা করতো ছাপার অক্ষরের গরম গরম কাগজটার জন্য। একের পর এক পাতা উল্টে যেতো। প্রথম পাতা হতে শেষ পাতা, মাঝে দেশ বিদেশের খবর, বাণিজ্য, কলাম, বিনোদন, খেলাধুলা; একেক শ্রেণির পছন্দের জায়গা একেক রকম। এখনও চাহিদার জায়গা একই আছে, আকাঙ্খার জায়গা বদলেছে। মানুষ এখন খবর চায় প্রতি মূহুর্তে। সংবাদপত্রের আগেই পৌঁছায় যে খবর, তা নতুন করে পরদিন পড়বে কেন? এই প্রশ্নের জবাব মাথায় রেখে দৈনিক আজাদী পাঠকদের জন্য জানা খবর ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ করছে অনলাইনে। পাঠক তাতে মগ্ন হতে বাধ্য। প্রিন্ট থেকে অনলাইনের বিপ্লবী বাঁক বদলে বাংলার মানুষের কাছে দৈনিক আজাদী বিশ্বস্ত মাধ্যম। সংবাদ প্রচারে সবার আগে প্রয়োজন প্রেজেন্টেশন। এখানে এগিয়ে দৈনিক আজাদী। ওয়েবসাইটে ঢুকলে পাঠক তার প্রয়োজনীয় সবকিছু যখন হাতের নাগালে পাচ্ছে, তখন তাকে এড়াবার সাধ্য তার থাকে না। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক। সেই আকাশে দৈনিক আজাদী নামক সূর্যটি চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পাঠকের। সূর্য চিরন্তন। সৃষ্টির শুরুতে বন্য মানুষদের যেভাবে পথ দেখিয়েছে, আজকের সভ্যদেরও একইভাবে দেখাচ্ছে। সামনের আরও উন্নত সভ্যতায়ও আপন আলোয় উদ্ভাসিত থাকবে দৈনিক আজাদী। প্রিন্ট থেকে অনলাইন হয়ে হয়তো আরও নতুন রঙে। দৈনিক আজাদীর বস্তুনিষ্ঠ, প্রাঞ্জল এবং সাবলীল সংবাদ পরিবেশনা বিগত ৬৩ বছর ধরেই কোটি বাঙালির সাথে অটুট বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। রাজনৈতিক বিষয়াবলী, সামাজিক ঘটনাবলী কিংবা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনায় সদা প্রগতিশীল দর্পণ হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে দৈনিক আজাদী। বস্তুনিষ্ঠ এবং সাবলীল সংবাদ প্রকাশে নিঃসন্দেহে দৈনিক আজাদী অন্যতম একটি পত্রিকা। সময়ের তাগিদে দৈনিক আজাদী অনলাইন এবং ডিজিটাল মাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশ করছে। তাদের ই-পেপার সংস্করণটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই যে কেউ পাঠ করতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দৈনিক আজাদী সমান তালে সত্য ও প্রাসঙ্গিক সংবাদ প্রকাশ করছে। যুগ যুগ ধরে মানুষের আস্থা অর্জন করা দৈনিক আজাদী পত্রিকার অনলাইন ও ডিজিটাল এসকল সংস্করণে রয়েছে হরেক রকম ফিচার, রঙিন ছবি ও ভিডিও যা পাঠকের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ধরা দিয়েছে। অনলাইন সংস্করণগুলোতে রয়েছে বৈচিত্র্যতা এবং যুগোপযোগী কন্টেন্টের সমাহার। পাঠকদের আকৃষ্ট করতে এগুলো খুবই কার্যকর। কালিক ধারাবাহিকতায় পঞ্চযুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে দৈনিক আজাদী ৬৩ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। লক্ষ তরুণের মনে উন্মাদনা জাগিয়ে আরো পাঁচ সহস্র যুগ বেঁচে থাকুক দৈনিক আজাদী এই কামনা করি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তবাক চর্চার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে দৈনিক আজাদী। ১৯৫৯ সালে যাত্রা শুরু করে বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলনের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করা পত্রিকাটি পাড়ি দিয়েছে বহু পথ। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দৈনিক আজাদী প্রকাশিত হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। সেই সাথে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন ঘটেছে পত্রিকাটির প্রকাশের ধরন। ১৯৫৯ সালে যখন দৈনিক আজাদী প্রকাশিত হওয়া শুরু করে তখন লেখাগুলো ভাষার রকম হয়তো অন্য আকারের ছিল। কিন্তু সময়ে সাথে বদলে গেছে পাঠকের রুচি ও চাহিদা। একবিংশ শতাব্দীর তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষে দৈনিক আজাদীকে বর্তমানে অনলাইন ও ইপেপার ভার্সনেও পড়তে পারছেন পাঠকেরা। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে লক্ষ্যে দৈনিক আজাদীর অনলাইন ভার্সনে নিয়মিত পাওয়া যায় জাতীয়, আন্তর্জাতিক, খেলা, বিনোদন, লাইফস্টাইল, টেক, ভিন্ন চোখ ও উপসম্পাদকীয় কলামে চমকপ্রদ সব সংবাদ। নির্ভরযোগ্য সংবাদের জন্য দৈনিক আজাদী অনলাইন মাধ্যম আমার পছন্দের তালিকা সবসময়ই শীর্ষে। বিশেষ করে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় কলামের লেখাগুলো পড়ার প্রতি আমার আগ্রহ থাকে সর্বদা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশের প্রাচীন গণমাধ্যম হিসেবে দৈনিক আজাদীর কাছে আমার প্রত্যাশা একটু বেশিই থাকবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দৈনিক আজাদীর অনলাইন ভার্সন এগিয়ে চলেছে দুরন্ত গতিতে। এ অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন নতুনত্ব ও পাঠক চাহিদা অনুযায়ী কন্টেন্ট নিয়ে আসা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইন মাধ্যমে ভিডিও নিউজ ও ফিচার কন্টেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত বলে আমি মনে করি। যুগের সাথে এগিয়ে যাক প্রিয় পত্রিকা দৈনিক আজাদী। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, বাঙালি জাতীয়তাবোধ এর উদ্ভব। ৭১’ থেকে এলো স্বাধীনতা। মুক্তি! কিন্তু মুক্তচিন্তা, মুক্তবোধ এর বিকাশ এর স্ফুরণ হয়েছিল দৈনিক আজাদীর হাত ধরে। দিন পেরিয়েছে, কত কিছু বদলে গেছে। আমরা কলম ছেড়ে কি-বোর্ড ধরেছি। কাগজ ফেলে স্মার্টফোন তুলে নিয়েছি। দৈনিক আজাদীও সময়ের সঙ্গে নিজেকে মেলে ধরেছে অনন্য রূপে। কত যুদ্ধ, কত শান্তি, কত নিপীড়নে দৈনিক আজাদী এগিয়ে গিয়েছে দুর্বার গতিতে। হোক প্রতিবাদ, কিংবা সুস্থ সংস্কৃতি দৈনিক আজাদী এর কলম কখনো থেমে থাকেনি বরং হয়েছে আরো তীব্র, অপ্রতিরোধ্য। প্রিন্ট কিংবা ডিজিটাল ফরম্যাট, আজাদী সমস্ত পরিসরেই বিরাট এক বটবৃক্ষ। সেটা হোক দৈনিক খবর, ফিচার, কলাম কিংবা সুস্থ বিনোদন। আজাদী বাঙালির মর্মে গাথা।একটি দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ আর ৬৩ বছর ধরে বাঙালির মুক্তচিন্তা চর্চার মাধ্যম হয়ে থাকা, কোনোটিই মুখের কথা নয়। আজ আজাদী এর ৬৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ভালো করে বললে আজ আজাদী এর জন্মদিন। কিন্তু এতো পথ পাড়ি দিয়েও দৈনিক আজাদী যেন আরো যুবক, আরো নতুন। যেই পত্রিকায় বাংলা, বাঙালি, মূল্যবোধ, চেতনা মিশে আছে তার জন্য হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধাবোধ এবং শুভকামনা। ৬৩ বছরের চিরতরুণ দৈনিক আজাদী কে শুভ জন্মদিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, রামু সরকারি কলেজ

পূর্ববর্তী নিবন্ধফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেশায় সচেতন হওয়ার আহবান
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা