দেড় হাজার শূন্যপদ পূরণ নিয়ে জটিলতা

স্থায়ী করার দাবি অস্থায়ীদের মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় চসিক

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বিপরীতে এক হাজার ৫৪৫টি শূন্যপদ রয়েছে। অথচ সংস্থাটিতে বর্তমানে অস্থায়ী কর্মরত আছেন সাত হাজার জন, যাদের অনেকেই ২০ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত।
শূন্যপদ পূরণে গত ২১ মাসে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছিল চসিক। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে ১৩ পদে ৬০ জন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তখন স্থায়ীকরণের মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের দাবিতে আন্দোলন করেন অস্থায়ীরা। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে চসিক। মেয়রও চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেন। ফলে বড় ধরনের কর্মসূচি থেকে সরে আসেন তারা। এ অবস্থায় গত মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগে এ বিষয়ে দাপ্তরিক পত্র দেয় চসিক। এতে সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত শূন্যপদসমূহ অস্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট শূন্যপদ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণে নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই পত্রে চসিক লিখে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের পর সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাবেন। তখন সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ পদই শূন্য হয়ে যাবে। তখন কর্পোরেশনের সার্বিক নাগরিক সেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। সেবা কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে চলতি ডিম্বেরের মধ্যে আবশ্যিকভাবে শূন্যপদ পূরণ করা প্রয়োজন।
গতকাল পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে শূন্যপদগুলোর বিষয়ে চসিকও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অন্যদিকে অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ’ এর ব্যানারে আন্দোলনের পথে হাঁটছে। ফলে শূন্যপদ পূরণ নিয়ে নতুন করে জটিলতায় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও চসিক সচিব খালেদ মাহমুদকে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে স্মারকলিপি দেয়ার মাধ্যমে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। স্মারকলিপিতে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। একই দাবিতে আগামী ৮ ডিসেম্বর টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এবং ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হবে। এরপর চসিক কী উদ্যোগ নিচ্ছে সেটা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক আবু তাহের আজাদীকে বলেন, স্মারকলিপি গ্রহণকালে মেয়র মহোদয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। যেসব পদ পূরণে বাধা নেই ওসব পদ অস্থায়ীদের মাধ্যমে স্থায়ীকরণে তিনি ইতিবাচক। তবে আমাদের কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। আমরা ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেখব। যদি এর মধ্যে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকে তাহলে আমরা কর্মবিরতি ও আমরণ অনশনসহ বড় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করব।
চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ আজাদীকে বলেন, নিয়োগ ও শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা বাস্তবায়ন করব। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আপাতত করার কিছু নেই।
জটিলতার শুরু যেভাবে : ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৮০০ শূন্যপদ পূরণে পৃথক ছয়টি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চসিক। এতে ৫০ হাজারের অধিক আবেদন জমা পড়ে। ওই বিজ্ঞপ্তির শর্তে বলা হয়েছিল, চসিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরতদের বয়স শিথিল করার পাশাপাশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত প্রায় চার হাজার অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীও আবেদন করেন। তবে ওই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমনকি বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিতও করেনি।
পরবর্তীতে ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ১৩ পদে ৬০ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যেখানে ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তি থাকা পদগুলোও রয়েছে। তবে এবার বয়সের শর্ত দেয়া হয়। ফলে আবেদনের সুযোগ হারান দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরতরা। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অস্থায়ীরা। অবশ্য বিজ্ঞপ্তিটি ২৩ সেপ্টেম্বর স্থগিত করা হয়।
চসিকের সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটি বর্তমানে ১৯৮৮ সালের জনবল কাঠামো ধারা পরিচালিত হয়। এতে সৃজিত পদের সংখ্যা ৩ হাজার ১৮০ জন। ২০১৯ সালে নতুন করে এক হাজার ৪৬টি পদ অনুমোদন দেয়। সব মিলিয়ে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৪ হাজার ২২৬টি। অনুমোদিত পদগুলোর বিপরীতে কর্মরত আছেন দুই হাজার ১৩৯ জন। এছাড়া ২০১৯ সালের অনুমোদিত পদগুলোর বিপরীতে ৫৪২টি আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে পূরণযোগ্য। ওই হিসেবে বর্তমানে শূন্যপদ রয়েছে এক হাজার ৫৪৫টি।
২০২০ সালে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে ২৩ মার্চ গঠিত নিয়োগের বাছাই কমিটিতে স্থানীয় সরকারের দুজন প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এছাড়া ১৫ মার্চ প্রধান নির্বাহীকে আহ্বায়ক ও চসিক সচিবকে সদস্য সচিব করে তৃতীয়-চতুুর্থ শ্রেণির এবং মেয়রকে আহ্বায়ক ও প্রধান নির্বাহীকে সদস্য সচিব করে দুটো নিয়োগ কমিটিও গঠন করে চসিক। এরপরও গত সেপ্টেম্বর মাসে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংস্থাটি। এতেও জটিলতা তৈরি হয়।
অস্থায়ীভাবে কর্মরতদের স্থায়ী করতে ১৩ জুলাই চসিক সচিবকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম। ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত এ কমিটির কার্যবিবরণীতে বলা হয়, এ পর্যন্ত কর্পোরশেনের যেসব অস্থায়ী কর্মচারী তাদের চাকরি স্থায়ীকরণে উচ্চ আদালতে মামলা করেছে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণে রায় হয়েছে। অন্য অস্থায়ীরাও আদালতে গেলে একই রায় হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। এতে আরো বলা হয়, বেশিরভাগ অস্থায়ী কর্মচারীর চাকরিকাল ১৫-২০ বছর। পূর্বে বিভিন্ন সময়ে চসিক সমপর্যায়ের সহস্রাধিক অস্থায়ী কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করেছে। প্রচলিত বিধিবিধান, কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয়তা, মানবিকতা-সবগুলো সমন্বয় করে অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে বলে এতে উল্লেখ করেন চসিকের আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন।
এদিকে গত মাসে মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, কর্পোরেশনের সাংগঠনিক কাঠামো থাকলেও তা লিখতে কোনো নিয়োগবিধি না থাকায় দীর্ঘ সময় স্থায়ী নিয়োগ প্রদান করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯২ সাল থেকে নিয়োজিত কর্মচারীগণ অস্থায়ীভাবে কাজ করে আসছেন। স্থায়ীভাবে নিয়োগ না করায় তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।
এতে বলা হয়, ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় কাউন্সিলরগণ অস্থায়ীদের স্থায়ীকরণে একমত পোষণ করেন। অস্থায়ীদের স্থায়ী করলে তাদের ভেতন-ভাতা পরিশোধের আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোয়ালখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশে আ. লীগের ২৫ প্রার্থীর নাম ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধঅর্থ পাচার : হাই কোর্টে দেওয়া দুদকের তালিকায় ৪৩ নাম