বান্দরবানে থানচি উপজেলায় বলিবাজারে সাঙ্গু নদীর উপরে এবং কেচুপাড়ায় সোনাখালের উপরে নির্মাণাধীন দুটি সেতুসহ সংযোগ সড়ক এখনো দৃশ্যমান হয়নি। কার্যাদেশ দেয়ার দেড় বছর পরও ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি। থানচিবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সেতু দুটি নির্মাণ হলে সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর। কিন্তু কাজের ধীরগতি অনিয়মের কারণে ক্ষুব্ধ থানচিবাসী।
প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে থানচি উপজেলায় সাঙ্গু নদীর উপরে ১৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বলিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদস্থ বলিবাজার থেকে বলিপাড়া পর্যন্ত ১৮০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ পায় যৌথভাবে মেজবা এবং এমএম ট্রেডার্স। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে মূলত কাজটি করছেন আওয়ামীলীগ নেতা ঠিকাদার অমল কান্তি দাস। কাজের বিপরীতে ঠিকাদার ইতিমধ্যে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছে।
অপরদিকে ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে কেচুপাড়া এলাকায় সোনাখালের উপরে ৮০ মিটারের একটি ব্রিজ, পাঁচ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, ড্রেইন, কালভার্ট, গাইড ওয়াল নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউটিমং। মূলত কাজটি বাস্তবায়ন করছেন রোটারিয়ান ঠিকাদার আনিসুর রহমান সুজন। ইতিমধ্যে কাজের বিপরীতে ঠিকাদার এক কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দলীয় প্রভাব বিস্তার এবং স্বেচ্ছাচারিতা করে বিভিন্ন অজুহাতে সাঙ্গু নদীর উপরে বলিপাড়া এলাকায় ব্রিজ নির্মাণ কাজটি বন্ধ করে রেখেছে আওয়ামীলীগের বান্দরবান পৌর শাখার সভাপতি ঠিকাদার অমল কান্তি দাস। চার বছর মেয়াদী প্রকল্পটির বিশ মাস পেরুলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ব্রিজের দুটি পিলারের পাইলিং এর কাজ করেই দায়সাড়া ভাবে উন্নয়ন কাজটি ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। তবে সোনাখালের উপরে ব্রিজ নির্মাণের কাজটি অনেকদূর এগিয়েছে। ইতিমধ্যে ব্রিজের তিনটি পিলার এবং একপাশের বক্সপ্লাটফর্ম তৈরির কাজ অনেকটায় এগিয়েছে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের কিছুই করেনি ঠিকাদার আনিসুর রহমান সুজন।
বলিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমা বলেন, ব্রিজ দুটি নির্মাণ হলে বদলে যাবে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। বলিপাড়া, বলিবাজার, কেচুপাড়া, ব্রক্ষ্মনদত্ত পাড়া, জ্ঞান লাল চাকমা পাড়া’সহ আশপাশের এলাকাগুলোতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। কিন্তু ঠিকাদারের ধীরগতিতে সঠিক সময়ের মধ্যে কাজগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত কাজগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা অমল কান্তি দাস বলেন, বৃষ্টিতে সাঙ্গু নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় কাজটি বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে পিলারের জন্য ১৪টি পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃষ্টি কমে যাওয়ায় দ্রুত কাজটি আবার শুরু করা হবে। রোটারিয়ান ঠিকাদার আনিসুর রহমান সুজন বলেন, নদী পথেই নির্মাণ কাজের মালামাল পরিবহণ করতে হয়। বৃষ্টিতে মালামাল নেয়া এবং খালে পানি বেড়ে যাওয়ায় কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো। খুব শীগ্রই কাজটি পুনরায় চালু হবে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুল আজিজ বলেন, গত বছরের মার্চ মাসে উন্নয়ন কাজগুলোর কার্যাদেশ দেয়া হয়। ব্রিজ নির্মাণ কাজের অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কাজগুলো সাময়িক বন্ধ রয়েছে। কিন্তু দ্রুত কাজগুলো আবারও চালু করা হবে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারদের কাজ শুরুর জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।