আনোয়ারার ইছামতি খালের কৈখাইন এলাকায় একটি ক্লোজার বাঁধ নির্মাণের জন্য ৫০ বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন ৫ ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। সে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত দুই বছর আগে বাঁধটি নির্মিত হয়। তখন আশার আলো দেখেন স্থানীয়রা। কিন্তু নির্মাণের দুই বছর যেতে না যেতেই বাঁধটির নিচে গর্ত হয়ে পানি আসা যাওয়া করছে। এছাড়া বাঁধের দুই পাশ দেবে যেকোনো সময় ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। স্থানীয়রা এটি রক্ষায় খালের উভয় পাশে আর সিসি গাইড ওয়াল নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।
স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছর আগে আনোয়ারা ইছামতি খালের কৈখাইন এলাকায় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালের মুখে ক্লোজার (বাঁধ) নির্মাণ কাজ শেষ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাবের এন্টাপ্রাইজ। মাটির এ বাঁধটিতে খালের উভয় অংশে কাঠের খুঁটি দিয়ে বাঁধ প্রটেকশন দেওয়া হয়। কিন্তু দুই বছর যেতে না যেতেই কাঠের খুঁটিগুলো ভেঙ্গে গেলে বাঁধটির প্রটেকশন দুর্বল হয়ে পড়ে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। তাছাড়া বর্তমানে বাঁধটির নিচে পানির লেভেলের অংশে ফুটো হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ধারনা এ অবস্থায় বাঁধটির দুপাশে আর সিসি গাইড ওয়াল নির্মাণ করা না হলে যেকোনো সময় ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সরা ভাবে কাজ শেষ করায় বাঁধের এ অবস্থা হয়েছে। তাছাড়া গত অর্থ বছরে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ বাঁধের পশ্চিমে নির্মিত হয় স্লুইস গেইট, সেটিও দায়সরা ভাবে কাজ শেষ করার অভিযোগ আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী জানায়, স্লুইচ গেইট নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একটি বিকল্প খাল কাটার কথা ছিল, কিন্তু সে খাল না কেটেই কাজ শেষ করার অভিযোগ রয়েছে।
এছড়াও ইছামতি খালের ক্লোজারের তিনশ গজ দূরে কান্দরিয়া খালের উপর চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্লুইস গেইটটি নির্মাণ ত্রুটি এবং মাছের ফাড় লাগিয়তের কারণে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এখন এই খালে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্রতিনিয়ত তলিয়ে যাচ্ছে লোকালয়। জোয়ারের পানিতে চাতরী, কেয়াঁগড়, সিংহরা, ডুমুরিয়া এলাকাসহ প্রায় এক হাজার একর জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় ৫ শতাধিক কৃষক এখন খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছে। কান্দরিয়া খালের খরস্রোতে ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট, মাছের ঘেরসহ মানুষের বাড়িঘর।
স্থানীয়রা জানান, দ্রুত কান্দরিয়া খালের স্লুইস গেইট পুনরায় নির্মাণ করা না হলে এই এলাকার কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ বড় ধরণের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
ক্লোজার নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাবের এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের নির্মাণ কাজে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়। কাজের সিডিউল অনুযায়ী ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার ব্যয়ে ৬৫ মিটার গভীর, ৫০ ফুট প্রস্থ এ (ক্লোজার) বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ সফলভাবে শেষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার রমজান আলী বলেন, গত বোরো মৌসুমে স্লুইস গেইট বন্ধ থাকায় আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে একজন অস্থায়ী লোক দিয়ে গেইট খোলার ব্যবস্থা করি। এখন বর্ষার মৌসুমে খালে প্রচুর পানি এবং প্রচন্ড স্র্রোত। দ্বিতীয় স্লুইস গেটটি নির্মাণ করার পর বিকল্প খাল কাটা হয়নি। ফলে বাঁধের উপর পানির অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে যেকোনো সময় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, আনোয়ারার ইছামতি খালের বাঁধসহ ক্ষতিগ্রস্ত স্লুইসগেইট গুলো সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজের উদ্যোগ নেওয়া হবে।