দেশ, পতাকা এবং আমাদের বোধ

রেহানা বীথি | বৃহস্পতিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

বেশ অনেকবছর আগে হুমায়ূন আহমেদের একটি সিনেমা দেখতে হলে গিয়েছিলাম। মোটামুটি দর্শকপূর্ণ হল। বাতি নিভে গেল। পর্দায় ভেসে উঠল জাতীয় পতাকা, বেজে উঠল জাতীয় সংগীত। আমরা উঠে দাঁড়ালাম। কিন্তু অধিকাংশই তখনও নির্বিকার বসে। কেউ পায়ের ওপর পা তুলে, আয়েসে বসে গল্প করছে আর বাদাম খাচ্ছে। কেউবা উসখুস করছে সিনেমা কেন শুরু হচ্ছে না এই ভেবে। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানানোর ইচ্ছে এবং মনোভাবের সঙ্গে তাদের পরিচিতি আছে বলে মনে হল না একবারও। বরং ওই সময়টুকু যে অযথাই নষ্ট হল, এমন প্রকাশ তাদের চোখেমুখে। ভীষণ ব্যথিত এবং অবাক হয়েছিলাম। বলেছিলাম, ‘আশ্চর্য তো, জাতীয় সংগীত বাজছে, অথচ এরা বসে আছে কেন?’ আমার কথাটুকু যাদের কানে গেল, উল্টে তারাই যেন ভীষণ অবাক। যেন যার ইচ্ছে সে বসে আছে, তাতে তোমার কী? কোনও অপরাধবোধ কিংবা লজ্জাবোধের ছিটেফোঁটাও ছিল না তাদের মধ্যে। লজ্জা যেন আমারই পাওয়া উচিৎ। লজ্জা পেয়েওছিলাম। গত দু’দিন ধরে সেই লজ্জা আবারও ফিরে এসেছে। কেন? পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ হোয়াইট-ওয়াশ হয়েছে সেই কারণে? না। আশানুরূপ না খেলে বাংলাদেশ হারতেই পারে, কিন্তু পাকিস্তানের পতাকা জড়িয়ে গ্যালারিতে কেন বসে থাকলাম আমরা? কেন তাদের জার্সি অঙ্গে ধারণ করলাম? বাংলাদেশের হারে দুখী না হয়ে পাকিস্তানের জয়ে এতটাই উল্লসিত হয়ে গেলাম যে, সেই পাকিস্তানের দীর্ঘ নয়টি মাস ধরে আমাদের দেশে চালানো ইতিহাসের ঘৃণ্যতম এবং বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ আর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কথা বেমালুম ভুলে গেলাম! ভুলে যাই! লজ্জিত হই। ভীষণভাবে লজ্জিত হই। আমরা অনেককিছু হারিয়ে স্বাধীন হয়েছিলাম। অনেককিছু হারিয়ে আমাদের পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়েছিল। তারও পরে অনেককিছু হারিয়ে আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পদার্পণ করেছি। এই এত বছরেও আমাদের দেশাত্মবোধের বিকাশ ঘটলো না কেন? কেন নিজেদের পতাকা, জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখাতে পারলাম না আমাদের পরবর্তী প্রজন্মদের? আমাদের ভুলগুলো ঠিক কোথায়? আর এই ভুলগুলো শুধরে নিতে আমরা আর কতটা সময় ব্যয় করবো?

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমাজের সবক্ষেত্রে নারীর প্রতিনিধিত্ব সমান করা প্রয়োজন
পরবর্তী নিবন্ধনারী থাকুক নিরাপদে