দেশে যাতে শান্তি বজায় থাকে তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে

শান্তি সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি

| শুক্রবার , ২২ জুলাই, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

শান্তি সূচকে বাংলাদেশের সাত ধাপ এগিয়ে যাওয়া অনেক বড় আনন্দের খবর। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক শান্তি সূচকে বিশ্বের ১৬৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৯১তম। সমপ্রতি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক থিংকট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস বিশ্ব শান্তি বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বৈশ্বিক শান্তি সূচক-২০২১ এ ৭ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।এই তালিকায় আগের বছরের অবস্থান ধরে রেখে শীর্ষস্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড। তবে এক ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে নিউজিল্যান্ড। পাশাপাশি দুই ধাপ এগিয়ে এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। তবে অবনমন হয়েছে পর্তুগালের। দেশটি ২ ধাপ নেমে এসেছে চতুর্থ স্থানে।

মূল ৩টি ক্ষেত্রের আওতায় সর্বমোট ২৩টি নির্দেশকের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। মূল ক্ষেত্র ৩টি হলো-সামাজিক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সংঘাত এবং সামরিকীকরণের মাত্রা। এছাড়া সূচক ২৩ টির মধ্যে রয়েছে-অস্ত্র আমদানি, সহিংস বিক্ষোভ, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যা, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অর্থায়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যার অনুপাত, পারমাণবিক এবং ভারি অস্ত্র, রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদের পরিমাণ, আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতা, সহিংস অপরাধ, বাহ্যিক সংঘাত থেকে মৃত্যুর পরিমাণ, অপরাধ বিষয়ে ধারণা, অভ্যন্তরীণ সংঘাতের গভীরতা, খুনের হার, কারাদণ্ড প্রদানের হার, বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার হার এবং এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে মৃত্যুর পরিমাণ।

আমাদের বাংলাদেশ সব সময়ই শান্তিপ্রিয় দেশ। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলাই আমাদের কূটনীতির মূলকথা। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতিই হলো সবার সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর এক লেখায় বলেছেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাই না, কোনো ধরনের যুদ্ধকে উৎসাহিতও করি না। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা অনেক। যুদ্ধ মানেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশুদের ব্যাপক প্রাণহানি। দেশের অবকাঠামো, সাধারণ নাগরিকদের জীবন ও সম্পদ একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। একটি দেশে যত ধরনের ক্ষতি হতে পারে, তার সবই ডেকে আনতে পারে যুদ্ধ। সে জন্য বাংলাদেশ কখনই যুদ্ধ চায় না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা এ নীতিতে বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলছে দেশ, ভবিষ্যতেও তেমনটাই চলবে। তিনি বলেছেন, শান্তি সূচকে কাঙ্ক্ষিত এ মান অর্জন একদিনে সম্ভব হয়নি। এর পেছনে রয়েছে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সুশাসনের সুস্পষ্ট ভূমিকা। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি যথার্থ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার ধারাবাহিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন পড়েছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের ফলে। এক দশকেরও অধিক সময়ব্যাপী যেভাবে বাংলাদেশকে পরিচালনা করছেন তিনি, যেভাবে শক্তিশালী করছেন দেশের অর্থনীতি, সামাজিক সুরক্ষার জাল যেভাবে বিস্তৃত করছেন দেশের আপামর প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়া পর্যন্ত, যেভাবে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করছেন দেশের মানুষের সবকিছুর সমন্বিত সুবিধা আজ লাভ করছে এ দেশের মানুষ।

বিশ্লেষকরা বলেন, যেকোনো রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সামাজিক ন্যায়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমতা জরুরি। সূচকে প্রথম হওয়া আইসল্যান্ডের ধনী-গরিবের ভেদাভেদ তেমন নেই। সেখানকার ৯৭ শতাংশ নাগরিক মধ্যবিত্ত। অর্থাৎ জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো নিয়ে তাদের বিচলিত থাকতে হয় না। দ্বিতীয়ত উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত এই ছোট্ট দেশটিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য নেই। শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও উদার চিন্তার দিক দিয়েও দেশটি এগিয়ে।

আমাদের দেশে শান্তময় পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য নানা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। অশুভ চক্র আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য এখানে বিদ্যমান, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটা চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। এ ব্যাপারে সরকার ও সচেতন নাগরিকদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে যাতে শান্তি বজায় থাকে, তার জন্য তৎপর হতে হবে। আমাদের সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিক শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে