বিশ্ব নার্স দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ, নার্সিং পেশার উন্নতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নিবন্ধিত নার্স থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে সেই সংখ্যাটি অনেক কম। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় নার্স রয়েছেন অর্ধেকেরও কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানদণ্ড ৮০ শতাংশ নার্সিং সেবার মানের ওপর নির্ভরশীল। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সিঙ্গাপুর, ভারত, ইংলান্ড, আমেরিকাসহ যেসব দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত, ওইসব দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির পেছনে নার্সদের সেবা প্রদানের ভূমিকা রয়েছে। তবে আমাদের দেশের নার্সরা শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে পদে পদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বছরের বিভিন্ন সময় এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সময় কাটাতে দেখা যায়। বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি এবং চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের ইন্সট্রাক্টর সন্তোষ কুমার রুদ্র আজাদীকে বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নার্সদের হাসপাতালে দিন–রাত খাটতে হয়। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে প্রায় সময় নার্সদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বিনিময়ে সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন প্রমোশন ছাড়া একই পদে চাকরি করছেন। যে পদে চাকরিতে যোগদান করেন সেই একই পদে চাকরি থেকে অবসর নিতে হয়। আবার নার্সিং কলেজ বা ইনস্টিটিউটে নার্সরা চাকরির বেনিফিট পাচ্ছেন না। অথচ নার্স ছাড়া বলতে গেলে পুরো দেশের স্বাস্থ্যসেবা অচল। তারপরও নার্সরা পদে পদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। নার্সরা দশম গ্রেডের ওপরে পদোন্নতি পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈষম্য। ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং নার্সরা এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হয়ে তিন বছর পড়াশোনা শেষে ছয় মাসের ইন্টার্ন করছেন। অথচ ডিপ্লোমা পাস করার পরও তাদের দেওয়া হচ্ছে এইচএসসি সমমান সনদ। আবার যারা এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পাস করে বিএসসি ইন নার্সিংয়ে পড়ছেন তারা বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। নার্সদের মধ্যে অনেকে মাস্টার্স করেছেন, অনেকে পিএইচডি করেছেন, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাচ্ছি না। আপনারা জানেন, করোনা মহামারীর সময় রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক নার্স মারা গেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা রোগীদের সুস্থ করে তুলেছেন। আজকে নানা বৈষম্যের কারণে এই পেশায় অনেকে আসতে চান না। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাই বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মবার্ষিকীর দিনটিকে নার্স দিবস হিসেবে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক নার্স কাউন্সিল। নার্সদের প্রতি সম্মান দেখাতে প্রতি বছর ১২ মে বিশ্বের দিবসটি উদযাপিত হয়।












