দেশে টিকা উৎপাদনের সম্ভাবনা কতটা?

| মঙ্গলবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

মহামারীর উদ্বেগ নিয়ে ২০২০ সাল পার করার পর নতুন বছর আসছে টিকার সুখবর নিয়ে; সেই সঙ্গে দেশেই টিকা উৎপাদনের ভাবনার কথা বলে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং সরকারের কর্মকর্তারা। এখন প্রশ্ন হল, বিদেশ থেকে প্রযুক্তি আনা গেলে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা কতটা আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলছেন, ‘দেশের বেসরকারি কয়েকটি ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানির সেই সক্ষমতা এবং প্রস্তুতি আছে। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগও করেছে। টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও সরকার এ বিষয়ে আলোচনা করছে।’ খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশের কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড নিজেরাই করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। ‘বঙ্গভ্যাক্স’ নাম দেওয়া এ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অপেক্ষায় আছে তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের ৫৬টি টিকা ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে আছে। এর মধ্যে রাশিয়া স্পুৎনিক-ভি টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে ডিসেম্বরের শুরুতে। মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের টিকা যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে ফাইজারের টিকা। এ দুটি দেশে টিকার প্রয়োগও শুরু হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মডার্নার টিকাও সে দেশে অনুমোদন পেয়েছে।
অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এখন পর্যন্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। বাংলাদেশ সরকার এই টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য ইতোমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সেই টিকা বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা যারা তৈরি করছে, তাদের কাছ থেকে প্রযুক্তি এনে দেশেই তৈরি করা যাবে বলে তারা আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা আছে। টেকনোলজি ট্রান্সফার করা হলেই দেশে উৎপাদনের কাজ শুরু হবে।’
আর স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তি আর উপাদান এনে টিকা তৈরির সক্ষমতা বাংলাদেশের থাকলেও পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে টিকা যারা তৈরি করেছে সেই কোম্পানির আগ্রহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের ওপর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, যেসব কোম্পানি টিকা দিতে রাজি, তাদের সবাইকেই শর্ত দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশকে টিকা উৎপাদনের সুযোগ দিতে হবে। আমাদের শর্ত হল, আমাদের ফ্যাসিলিটি থাকলে তারা বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন বানাতে দেবে। কারণ তাদের সবার তো এত ফ্যাসিলিটি নেই যে পুরো বিশ্বকে বানিয়ে দেবে। বিষয়টি আমরা আমাদের স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করে রেখেছি।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনাভাইরাস টিকা বিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্য এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, নতুন করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি হওয়ায় পুরো বিশ্বেই আশা জেগেছে। কিন্তু কোনো টিকাই লাইফ লং না। মডার্নার টিকার কার্যকারিতা তিন মাস, অঙফোর্ড-স্পুটনিক দুই বছর থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার পর দুই বছর না গেলে বোঝা যাবে না এর কার্যকারিতা আসলেই দুই বছরের কিনা। আর সে কারণেই দেশে টিকা তৈরির প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণ মানুষকে যদি নিয়মিত টিকা দিতে হয়, সেক্ষেত্রে দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সরকারি উদ্যোগে ইডিসিএল (এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড) এখনও টিকা উৎপাদনে যায়নি। বেসরকারি কিছু ফার্মাসিউটিক্যালসের এই সক্ষমতা রয়েছে; করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করতে পারে এমন সেটআপ তারা রেডি করছে বলে জেনেছি। এ ব্যাপারে সরকার তাদের সহায়তা করবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধকোভিডের নতুন প্রজাতিকে কি রুখতে পারবে টিকা?