দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর বন্ধ রাখা নয়

নুরুন্নাহার ডলি | রবিবার , ৩০ মে, ২০২১ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

স্কুল-কলেজ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অন লাইন ক্লাস করতে চেষ্টা অবিরাম। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাসেই আসতে চায় না। ফোন করতে করতে টায়ার্ড, নেট থাকে না, বিদ্যুৎ বিভ্রাট প্রায়শই থাকে, এমবি কিনতে টাকার সমস্যা। হয়তোবা ৫% ক্লাস করতে পারলেও ৯৫ % ক্লাস করার যোগ্যতাই রাখে না (অর্থনৈতিক দীনতা)। আবার তার মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের মধ্যে ২% ফ্রি গেইম খেলায় ব্যস্ত সময় পার করছে। আমি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যতটুকু এগিয়েছে তার দশগুণ পিছিয়ে গেছে। যতই এসাইনমেনট দেই যতই পড়নোর চেষ্টা করি না কেন কোন কাজ হচ্ছে না। আমি আমার জায়গা থেকে বলতে চেষ্টা করি, কিছু অভিভাবকের মন্তব্য দিচ্ছি। *ম্যাডাম, ছেলে বড় হয়ে গেছে মারতে পারছি না, বলছি পড়তে ক্লাস করতে। করে না ম্যাডাম। *ম্যাডাম, সারাদিন মোবাইলে গেইম খেলে, ফেসবুকে থাকে, কিন্তু ক্লাস করতে বললে, করে না । *ম্যাডাম আমি দিনমজুর আমার পক্ষে মোবাইল কেনা সম্ভব না। *ম্যাডাম আর মেয়েকে পড়াবো না, বিয়ে দিয়ে দেবো । *ম্যাডাম ছেলে ঘরে থেকে থেকে নেটে খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। *ম্যাডাম এই করোনার সময়ে আমার কাজ কাম তেমন নাই তাই ছেলেকে চাকরিতে দিয়েছি, খাইতে তো হবে। *ম্যাডাম আমাদের বেতন ভাতা বন্ধ পরিবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি, ঘর ভাড়া, খানা, স্কুলের বেতন চালানো যাচ্ছে না। এমন হাজারো কথা শুনছি, ত্যক্ত বিরক্ত হচ্ছি। আবার ধৈর্যের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত গিয়ে আবার বোঝাচ্ছি। বুঝতে পারছি না কত আর কত। কবির ভাষায় বলতে হচ্ছে, ‘রাত পোহাবার কতো দেরি পাঞ্জেরী? ’ করোনা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আমরা সাধারণ মানুষ শুধু শুনছি, দেখছি ।
সব কিছু খোলা, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আরে ভাই শিক্ষার্থীরা কী ঘরে বসে থাকছে? টেবিলে বসে পড়ছে? মোটেই না। তারা খেলছে, আড্ডা দিচ্ছে, বাজারে যাচ্ছে, বেড়াচ্ছে, কেননা কোন কিছু বন্ধ নাই তো। শুধু পড়াশুনা বন্ধ। সকাল দুপুর সন্ধ্যা আপনি একটু রাস্তায় বের হন দেখবেন, টিন এজ ছেলেরা রাস্তার পাশে ফুটপাতে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা খালি ভ্যানে গোল হয়ে বসে (মিনিমাম আট থেকে দশজন প্রতি গ্রুপে )মোবাইলে বিভিন্ন গেম খেলছে অথবা খারাপ কিছু দেখছে অথবা ফেসবুকিং করছে। আপনি কি পারছেন আপনার টিনেজ ছেলেটাকে ঘরে আটকে রাখতে? আবার বেশি আটকানোর চেষ্টা করলেও তো মানসিক সমস্যা হবে। আমি আমার কথা বলি। আমার পক্ষে দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকা অসম্ভব। তাইতো এবারের ঈদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের একান্ত ঘনিষ্ঠজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছি। এমন কি আমার শিক্ষার্থীদেরও আমার বাসায় দাওয়াত দিয়েছি। করোনায় যত মৃত্যুর সংখ্যা আমার মনে হচ্ছে মানসিক রোগীর সংখ্যা তার দ্বিগুণ হয়েছে। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শুধু এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে তিনদিন স্কুল কলেজ খুলে দেওয়া হোক। প্রতিষ্ঠান ছাড়া লেখা পড়া অসম্ভব। অভিভাবকরা একটু শান্তি পাক যে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে, চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদখলকৃত সরকারি ভূসম্পদ উদ্ধারে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বের প্রথম নারী ভাষাশহীদ বাংলাদেশের কমলা