দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ বাজারটি ফিরে পাক হারানো ঐতিহ্য

| শুক্রবার , ১৬ জুলাই, ২০২১ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ দেশের ভোগ্যপণ্যের প্রধান পাইকারি বাজার। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কর্ণফুলী নদীর স্রোতধারা থেকে প্রবাহিত চাক্তাই, রাজাখালী ও বদরশাহ এ তিনটি খালের উপকণ্ঠে গড়ে ওঠে এই বাজার। জানা যায়, এই বাণিজ্যকেন্দ্রটির গোড়াপত্তন ১৮৭৫ সালে। যেটি এক সময় রাতদিন মুখর থাকতো দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীদের পদচারণায়। ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা এই বাজার হরেক রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ভোগ্যপণ্যের জন্য বিখ্যাত। দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বছরওয়ারি বাণিজ্য চলে এই বাজারকে ঘিরেই। দেশের অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের বাজারগুলো কম বেশি নিয়ন্ত্রিত হয় এ পাইকারি বাজারকে ঘিরে। স্বাধীনতার পর গেল পাঁচ দশকে এই বাজারের অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। আগে যেমন ছিল, এখনো তেমন। নেয়া হয়নি পরিকল্পনাও। ফলে ক্রমেই জৌলুস হারাতে বসেছিল দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই খাতুনগঞ্জ। কমেছে কর্মচাঞ্চল্য, বেচাকেনা আর লেনদেন। জেঁকে বসেছে নানা সমস্যা। এমন অবস্থায় গত ১৪ জুলাই দৈনিক আজাদীতে ‘চেনা রূপে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ’ শীর্ষক প্রকাশিত একটি সংবাদ ব্যবসা-সংশ্লিষ্টদের নজর কেড়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে অবশেষে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। করোনাকালে দফায় দফায় লকডাউনের ধাক্কায় এ এক সময় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এছাড়া বাজারে রয়েছে ক্রেতার সংকট। তবে লকডাউন শিথিল হওয়ার ঘোষণায় গত মঙ্গলবার দিনভর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনতে ছুটে আসেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে। তবে এ সময় অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে সারি সারি ট্রাক ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। শ্রমিকরা এসব ট্রাকে হাঁকডাক দিয়ে পণ্য লোড-আনলোড করছেন। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাকালে লকডাউনের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নামে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্রেতারা আসতে পারেনি। এছাড়া পরিবহন সংকটও ছিল। ফলে প্রতিদিনের লেনদেন নেমে আসে অর্ধেকেরও নিচে। অন্যদিকে ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সীমা কমে যাওয়ায় লেনদেনে প্রভাব পড়ছে। তবে সরকার ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করার উদ্যোগ নেয়ায় এখন বেচাবিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।
তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা করোনাকালে ভালো নেই। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ক্রেতা সংকটের কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাণিজ্য কমেছে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে দেশের ভোগ্যপণ্য বাজারে। তবে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা কোরবানিকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াবে বাণিজ্য কেন্দ্র। সেই আলোকে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাচ্ছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ। ক্রেতারা ক্রমশ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জমুখী হচ্ছে। আজাদীতে প্রকাশিত খবরের আলোকে বলা যায়, কোরবানিকে সামনে রেখেই স্বপ্ন বুনছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতির শুরু থেকে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের বাণিজ্য নিম্নমুখী। করোনাভীতির কারণে অনেক ব্যবসায়ী চাক্তাই খাতুনগঞ্জে আসেন নি। এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে। করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী ও ব্যবসাসংশ্লিষ্ট অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে মারাও গেছেন কয়েকজন। ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাই অনেক ব্যবসায়ী সীমিত আকারে করছেন ব্যবসা বাণিজ্য। অনেক আমদানিকারক আবার করোনাকালে একবারের জন্যও আসেননি চাক্তাই খাতুনগঞ্জে। তারা ম্যানেজার ও স্টাফদের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। দেশের অন্যতম এ পাইকারি বাজারের দুরবস্থার ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে ভোগ্যপণ্যের বাজারেও।
করোনা পরিস্থিতির কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ব্যবসার যে নাজুক অবস্থা ছিল, তাতে পরিবর্তন আসা শুরু করেছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে ব্যবসা-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে আমরা ব্যবসায়ী নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অন্তত মুখে মাস্ক পরে ব্যবসা পরিচালনার দরকার রয়েছে। কোরবানিকে উপলক্ষ করে যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসছে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে, তাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। আমরা চাই, দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজারটি আবার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে