দেশজুড়ে বই উৎসব: সরকারের সফল উদ্যোগ

লিপি বড়ুয়া | মঙ্গলবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ at ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

নতুন বছরের প্রথম দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া বর্তমান সরকারের একটি সফল সার্থক এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই সুন্দর আয়োজনকে অভিনন্দন সাধুবাদ জানাই। নানা প্রতিকুলতা কাটিয়ে এত বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করার মতো সাহসী উদ্যোগ সফলভাবে শেষ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার, শিক্ষা মন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে স্যালুট জানাই। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষাই জাতির এগিয়ে যাওয়ার সোপান।

একজন শিক্ষার্থীর কাছে বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পাওয়া ভীষণ আনন্দের। বই উৎসব নিয়ে সারাদেশ জুড়ে যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায় তা সত্যি বিমুগ্ধ করে আমাদের। এমন উৎসব চারিদিকে সুখের বাতাবরণ ছড়ায়।

টানা ১১ বছর দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর এই উৎসবে ছেদ পড়ে। করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সাড়ে ৩৪ কোটির বেশি কপি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাকপ্রাথমিক, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি মিলিয়ে এই স্তরে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলিয়ে ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার বই ছাপা হচ্ছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৭ কপি।

আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বই উৎসবের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩১ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণির একজন করে শিক্ষার্থীর হাতে এক সেট করে বই তুলে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন তিনি। ১ জানুয়ারি সারা দেশে একযোগে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই উৎসব গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে। আর প্রাথমিক পর্যায়ের বইয়ের কেন্দ্রীয় উৎসব হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। অনুষ্ঠানে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি, কর্মকর্তা, শিক্ষকশিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় উৎসব হলেও বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পায়নি। তবে হতাশ হবার কিছু নেই। নানামুখী জটিলতায় এবার ছাপার কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কয়েকটি করে বই হাতে পেয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম জানান তাদের কিছু বই এখনো বাকি আছে, যা কয়েকদিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে বলে আশা করছেন। দেশের সব উপজেলায়ই বই পৌঁছানো হয়েছে। সব শিক্ষার্থীর হাতেই নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। সাধারণত প্রথম দিনেই সবাই স্কুলে আসে না। তাই যারা আসবে তাদের সবাই বই পাবে। কাগজ সংকটের মধ্যেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন যত বেশি সম্ভব বই স্কুলে পৌঁছানোর। আর এতে সকলেই আন্তরিক ছিলেন।’

শত প্রতিকূলতার মাঝে ও শিক্ষার্থীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন এখানেই সরকারের সার্থকতা। নগর থেকে গ্রাম অবধি আনন্দ ছড়িয়ে দিয়েছে এই বই উৎসবের আমেজ।

নতুন বছরের প্রথম দিনে বই উৎসব ঘিরে শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করে।

কনকনে শীত উপেক্ষা করে সকাল সকাল শিক্ষার্থীরা বই উৎসবে যোগ দেয়। ইংরেজি নতুন বছরের শুরুর দিনটি নতুন বই হাতে তাদের মুখে আনন্দ উচ্ছ্বাসের হাসি ফুটে উঠে।

এই দিনটি শিক্ষার্থীর জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করে। শিক্ষক অভিভাবকদের মনেও স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা যায়। নতুন বছর নতুন ক্লাস এর সাথে যদি যুক্ত হয় নতুন বই তাহলে তো কথাই নেই। লাল ফিতা আর রঙিন কাগজে মোড়ানো নতুন বই পেয়ে বাঁধভাঙা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থীকে নতুন বই হাতে নিয়ে মলাট উল্টিয়ে বই ঘ্রাণ নিতে ও দেখা গেছে।

নতুন বই হাতে সন্তানের উচ্ছ্বাস দেখে অভিভাবকের চোখে মুখে ও আনন্দ ভর করেছে। একটি জাতি এগিয়ে যাওয়ার প্রথম শর্ত হলো সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষার প্রধান অনুসঙ্গ বই। তাই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে যাচ্ছে। বই উৎসব নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

লেখক : কবি, গল্পকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রয়োজন মানসিক সাপোর্ট
পরবর্তী নিবন্ধজ্ঞানই শক্তি জ্ঞানই আলো