দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ। প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, লেখক ও সম্পাদক। ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় ও দৃঢ় সমর্থক হিসেবে তিনি সমকালে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের জন্ম ১৯০৮ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার তেঘরিয়া গ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন দুহালিয়ার মধ্য ইংরেজি স্কুলে। ১৯৪৮ সালে সুনামগঞ্জ কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিভাগে পদে যোগ দিয়ে মোহাম্মদ আজরফ শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন এবং ১৯৫৪ সালে এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি বিভিন্ন কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি আবুজর গিফারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং আসাম প্রাদেশিক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সমর্থক ছিলেন। ১৯৪৬ সালে আসামে বহিরাগত মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এবং ১৪৪ ধারা অমান্য করার কারণে তিনি কারারুদ্ধহন। ১৯৪৯ সাল থেকে আজীবন তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি ছিলেন। ‘নও বেলাল’, ‘যুগভেরী’ প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন মোহাম্মদ আজরফ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও দর্শনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ সুস্পষ্ট। এসব বিষয়ে তিনি লিখেছেন শতাধিক গ্রন্থ। যার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ষাটটি। তাঁর রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘তমদ্দুনের বিকাশ’, ‘ইতিহাসের ধারা’, ‘সত্যের সৈনিক আবুজর’, ‘ধর্ম ও দর্শন’, ‘বিজ্ঞান ও দর্শন’, ‘মরমী কবি হাসন রাজা’, ‘গল্প সংকলন’ ইত্যাদি। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অসাধারণ অবদানের জন্য মোহাম্মদ আজরফ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, আন্তর্জাতিক মুসলিম সংহতি পুরস্কার, একুশে পদক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার, শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার, বাংলাদেশ মুসলিম মিশন পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৯৯ সালের ১ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।