দেউলিয়া আদালতে মামলা মাত্র ১৪

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ জুন, ২০২২ at ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃত নিঃস্বরা নয়, আর্থিকভাবে সচ্ছলরাই দেউলিয়া হতে বেশি আবেদন করেন। আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পাওনাদারের টাকা না দিতেই তারা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার জন্য মামলার মাধ্যমে আবেদন করেন। যেহেতু তারা সচ্ছল, সেহেতু তাদের দায়ের করা মামলার আবেদন বিচারে টিকে না, খারিজ হয়ে যায়। অন্যদিকে প্রকৃত নিঃস্বরা মামলায় না আসায় এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। আইনজীবীরাই জানিয়েছেন এই তথ্য। চট্টগ্রামের একমাত্র দেউলিয়া আদালতে একসময় প্রচুর মামলা বিচারাধীন ছিল। বর্তমানে এই আদালতে মামলা রয়েছে মাত্র ১৪টি। প্রসঙ্গত, যখন কোনো ঋণখেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, মর্টগেজ রাখা সম্পত্তিসহ তার নিজের সকল সম্পত্তির মূল্যের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি হয়, তখন দেউলিয়া আদালতের আশ্রয় নেন।
প্রকৃত নিঃস্বরা কেন মামলা করে না জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, প্রকৃত নিঃস্বদের মামলার খরচ চালানোর টাকা থাকে না। এছাড়া তাদের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থাও নেই, যার কারণে তারা মামলায় আসেন না। এদিকে নিজেকে নিঃস্ব দাবি করে ২০১৭ সালে দেউলিয়া বিষয়ক আইনে একটি মামলা করেন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা একরামুল হক। রাউজানের এই বাসিন্দা মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা ও ইস্টার্ন ব্যাংক জুবিলি রোড শাখা থেকে নেয়া ৫টি ক্রেডিট কার্ড বাবদ তার ঋণের পরিমাণ ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৩৯ টাকা। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ২০০৪, ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৭ সালে তিনি এসব ক্রেডিড কার্ড গ্রহণ করেন। অবসরে যাওয়ার পর মেসার্স আরবি ট্রেডার্স নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন। উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য তিনি তার সকল উপার্জিত অর্থ ও তার নামে থাকা একটি ফ্ল্যাট ব্যাংকে বন্ধক রেখে বন্ধকী টাকা উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি অংশীদারের কাছে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হন। এতে তিনি সমস্ত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। মামলার আরজিতে তিনি প্রার্থনা করেন, নিঃস্ব অবস্থায় দেনা পরিশোধে অক্ষম বিধায় তাকে উপরোক্ত দেনার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেউলিয়া ঘোষণা করা হোক।
এ মামলার বিবাদী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের আইনজীবী সাইদ মোহাম্মদ হারুন আজাদীকে বলেন, আপত্তি দাখিলসহ মামলার আরো কিছু পর্যায় সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে এ মামলা ইস্যু গঠন পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণা হবে। আশা করছি, রায় বাদীর পক্ষে যাবে না, খারিজ হয়ে যাবে। টাকা না দিতেই তিনি এ আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন, যা ব্যাংকের পক্ষে আদালতকে আমরা বলেছি।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালে চট্টগ্রামের দেউলিয়া আদালতে মামলা ছিল ১৪টি। ২০২১ সালেও তা। যুক্ত হয়নি নতুন কোনো মামলা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত নতুন দুটি যুক্ত হলে মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬টিতে। এ সময় নিষ্পত্তি হয়েছে দুটি মামলা। বাকি ১৪টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের দেউলিয়া আদালতে দেউলিয়া বিষয়ক আইনে মামলা দায়ের হয় ১১টি। এ সময় মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২টি।
আইনজীবীরা বলছেন, সংখ্যায় কম হওয়ার পরও এসব মামলার বিচার দ্রুত শেষ হয় না। নিষ্পত্তির হার অত্যন্ত কম। গুরুত্ব অনুধাবন করে স্থাপিত পৃথক এ আদালতে অন্যান্য দেওয়ানী মামলা থাকায় এসব মামলা তেমন গুরুত্ব পায় না। আবার যেসব ব্যক্তি বা কোম্পানি দেউলিয়া মামলার সাথে জড়িত তারা নানা কৌশলে শুনানির জন্য সময় নেন। ফলে মামলা শেষ হয় না।
দেউলিয়া আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত আইনের সংশোধন জরুরি উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, চার বছর আগে দেউলিয়া আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। খসড়াও প্রণয়ন করা হয়। যেখানে বলা হয়, ঋণ নিয়ে দেউলিয়া হওয়ার পর কেউ নিজ নামে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ভোটও দিতে পারবে না। নতুন করে ঋণ নিতে পারবে না। দেশ ত্যাগ করতে পারবে না। এসব ছাড়াও উক্ত খসড়ায় প্রয়োজনীয় আরো অনেকগুলো বিষয় যুক্ত করা হয়। দুঃখের বিষয়, এখন পর্যন্ত আইন সংশোধনের উক্ত বিষয়টি আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবরষার রূপ হেরি মানবের মাঝে
পরবর্তী নিবন্ধদেশে প্রথমবারের মত গর্ভাবস্থায় শিশুর জিনগত ত্রুটি নির্ণয় চালু