দূষণ রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ

| শুক্রবার , ২৭ মে, ২০২২ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দূষণ জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। দেশের অর্থনীতি থেকে শুরু করে সমস্ত খাত এখন দূষণের শিকার। দূষণ বলতে সাধারণভাবে বোঝায় মানুষের নিজস্ব স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত করা, যা প্রধানত বর্জ্য বা ক্ষতিকর পদার্থ দ্বারা বায়ু, পানি ও মৃত্তিকা দূষণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। গত কয়েক দশকে জনসংখ্যা বিষ্ফোরণ দূষণ সমস্যা গুরুতর করে তুলেছে। অধিক জনসংখ্যা মানে প্রাকৃতিক সম্পদের অধিক ব্যবহার, যার পরিণাম অধিক দূষণ।

দূষণের প্রভাবে বিপযর্স্ত হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে, যতই দিন যাচ্ছে, পরিবেশ দূষণ ততই বাড়ছেই। বায়ুদূষণে পৃথিবীর শীর্ষ দেশ বা শহরের তালিকায় প্রায়ই বাংলাদেশ বা ঢাকার নাম স্থান পায়। আর্সেনিক দূষণ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ, শব্দদূষণ প্রভৃতি তো রয়েছেই। অভিজ্ঞদের মতে, কঠিন বর্জ্যজনিত দূষণ বাংলাদেশের একটি প্রধান সমস্যা। বিভিন্ন শহরে বিপুল পরিমাণে কঠিন বর্জ্য জমা হয়। বর্তমানে কেবল ঢাকা নগরীতেই প্রতিদিন প্রায় ১,৫০০ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর পরিমাণও বাড়ছে। বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে খাদ্যের উচ্ছিষ্ট, ঘাস, গাছপালা, কাগজ, কাঠের টুকরা, কাপড়, প্লাস্টিক, পলিথিন জাতীয় পদার্থ, কাঁচ এবং নির্মাণ সামগ্রীর অবশিষ্ট।

‘গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে বায়ু, পানি, সিসা এবং কর্মক্ষেত্রে দূষণের শিকার হয়ে মারা গেছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ জন মানুষ। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট-এ উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে পরিবেশ দূষণে মৃত্যুর সংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ।

বায়ু, পানি ও শব্দদূষণ যেন আজ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যের ওপর। রোগবালাই বাড়ছে। জলবায়ুর প্রতিকূলতাও রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়াচ্ছে। মানুষের কর্মকাণ্ড পরিবেশের উপাদানে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সৃষ্টি করে, করে পরিবেশ দূষণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘পরিবেশের ওপর দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও খাদ্যাভাবজনিতসহ নানা জটিল ও অপরিচিত রোগ দেখা দিচ্ছে।’ অতি সম্প্রতি নগরীর হালিশহর এলাকায় ডায়রিয়া বেড়ে ওঠার জন্যও পানিদূষণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তা-ই নয়, বায়ুদূষণের কারণে হাঁপানিসহ ফুসফুসের রোগ বেড়ে উঠছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, পরিবেশের বিপর্যয় মানে জীবনের বিপর্যয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘প্রাণীর স্বাস্থ্য, প্রাণী উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন একটি আন্তঃসম্পর্কিত জটিল প্রক্রিয়া। এর ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে রোগের প্রাদুর্ভাব, উৎপাদন ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু। এমনিতেই বৈরী জলবায়ুর করালগ্রাস থেকে রেহাই পাচ্ছে না বাংলাদেশও। পাশাপাশি যোগ হয়েছে পরিবেশ দূষণ। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাই দূষণ রোধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। দূষণ রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর অভিযোজন কৌশল দ্রুত গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
পরিবেশ দূষণ রোধে সরকার আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে অনেক পদক্ষেপই নিয়েছে। দূষণ রোধে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং ১৯৯৭ সালে পরিবেশ দূষণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। পরিবেশ আদালত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিচারিক আদালতে বিশেষায়িত পরিবেশ বিচার ব্যবস্থা চালু করা হয় ২০০০ সালে। পরিবেশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত আইনের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু আইনসমূহের অধিকাংশই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। মাঝে মধ্যে কিছু অভিযান পরিচালিত হলেও তার ফল জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সমর্থ নয়।

দেশের প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক পরিবেশ আদালত এবং সারা দেশের জন্য এক বা একাধিক পরিবেশ আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয় আইনে। পরিবর্তনের হাওয়ায় আগের আইনটি রহিত করে ২০১০ সালের পরিবেশ আদালত আইন নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া সবার সহযোগিতায় প্রণীত হয়েছে জাতীয় সংরক্ষণ কৌশল (ন্যাশনাল কনজারভেশন স্ট্র্যাটেজি) এবং বিশেষত জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা অ্যাকশন প্ল্যান। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, পরিবেশ রক্ষায় তেমন সুফল মিলছে না। তাই পরিবেশ দূষণ রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। দূষণ রোধে উন্নত দেশগুলো যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে আমাদের দেশেও অনুরূপ প্রয়োগ দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে