দূরের দুরবিনে

অজয় দাশগুপ্ত | শুক্রবার , ১৬ জুলাই, ২০২১ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু : যথেচ্ছ না প্রয়োজনীয় অনিবার্য হাতিয়ার
বঙ্গবন্ধু যতদিন ছিলেন বাংলাদেশ পথ হারায় নি। এই পথা হারানো বিষয়টা আসলে কি? এটা বোঝার জন্য বঙ্গবন্ধু পরবর্তী বাংলাদেশকে দেখলেই বোঝা সম্ভব। একের পর এক সরকার আর চেতনা হননে দেশ হয়ে উঠেছিল ভয়াল। সামাজিক পরিবেশও ছিলো ভয়াবহ। এই মহানায়ককেও আমরা একত্রে মানি না। অপরাজনীতির অপকৌশলে তিনিও বিতর্কিত। সাধারণ মানুষ এই বিতর্কে না থাকলেও অপরাজনীতি তাঁকে ছাড় দেয় নি। এই দুর্ভাগ্য আমাদের এখনো ছাড়ে নি। অথচ আজ আমরা এই নেতার একশতম জন্মদিন পেরিয়ে এসেছি। দেশের বয়সও ৫০। আর কতোকাল লাগবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে? দুনিয়ার কোন দেশে এমন বিতর্ক নাই। আধুনিক তুরস্কের জনক নামে পরিচিত কামাল বিন আতার্তুক। আতার্তুক শব্দের অর্থই জনক। সে তুরস্ক আজ বহু জায়গায় বহু কারণে পরিবর্তিত। কিন্তু এই নিয়ম পাল্টায় নি এবং তাঁকে নিয়ে কারো কোন খেদ বা অশ্রদ্ধা দেখি না। গান্ধী জিন্নাহকে নিয়েও তাঁদের দেশের জনগণ সন্তুষ্ট। গোলমাল খালি আমাদের বেলায়।
কেন এবং কি কি কারণে সে কথা থাক। অন্তত এই একজন মানুষের বেলায় কি আমরা কি এক হতে পারি না? আর কতোদিন এই বিবাদ? কত পানি গড়ালো কতো দেশ আবার ভাঙলো গড়লো আমরা এই বিষয়েও সহমত হতে পারলাম না। নেতা যদি কেউ থাকেন তো তিনি একজনই। তাঁকে বাদ দিয়ে এদেশের ইতিহাস মুক্তি কিংবা সংগ্রাম ইতিহাস কিছু হয় না। হবে না। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস উহ্য থাকার পরও সূর্যের আলোর মত তিনি ছিলেন মাথার ওপর। তাঁর এক ভাষণে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাওয়া ভীতু পাকিরা নির্বিচারে গণহত্যা করার পর ও বাঙালি দমে নি। তাদের বুকের ভেতর অভয় বাজাতো এই ভাষণ। সে মানুষটিকে পাকিস্তান আমেরিকা চীনের আঁতাত ও মারতে পারে নি। মারার সাহস করে নি। অথচ আমরা বাঙালিরা তা করেছি। বাঙালির মুক্তির জন্য স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে না পারা মানুষটি কি এমন হত্যার শিকার হবার কথা? না এটা ন্যায়? অথচ এই কালো দিন এই অন্যায় নিয়েও রাজনীতি হয়েছে। রক্তমাখা কেক কেটে জন্মদিন পালনের ভয়াল সংস্কৃতি আপাতত চাপা পড়ে আছে। কিন্তু সুযোগ পেলে মাথা চাড়া দেবে না তার কোন গ্যারান্টি আছে কি?
আওয়ামী লীগ মুখে যা বলুক তাদের দেখে মনে হয় না তারা এ কাজ করতে পারবে। কারণ সরকারে থাকতে থাকতে তারা অন্যভাবে ব্যস্ত। রাজপথ ও মাঠের নেতা বঙ্গবন্ধু তাঁদের আদর্শ হতে পারে কিন্তু তাঁকে যতোটা চর্চা করা দরকার তাঁকে যতোটা নিতে পারলে তিনি সবার হবেন তার দেখা নাই। অথচ দেশে দেশের বাইরে বাঙালি বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি তৎপর। আমরা মানি আর না মানি মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারীরাও এখন নতজানু।
একাত্তরের পুরো সময় ধরে আমাদের বিরোধিতাকারী আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, সহিংস ও কাপুরুষোচিতভাবে বাংলাদেশের জনগণের মাঝ থেকে এমন প্রতিভাবান ও সাহসী নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া কী যে মর্মান্তিক ঘটনা!
দীর্ঘকাল বিদেশে বসবাস করার কারণে নানা দেশে যেতে হয়েছে। উপমহাদেশে রাজনৈতিক নেতা গান্ধী ব্যতীত কাউকেই তেমন চেনেন সাধারণ মানুষ। শুধু বাংলাদেশ বললেই প্রবীণ মানুষেরা বলেন, ওহো তোমরা না শেখ মুজিবকে মেরে ফেলেছিলে? কেউ কেউ এই সেদিনও বলতেন এই কাজের জন্য তোমরা অভিশপ্ত। অষ্ট্রেলিয়ায় শায়িত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাচ অষ্ট্রেলিয়ান বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ড বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশের কথা বললেই রেগে যেতেন। তাঁর কথা ছিলো: এ কারণেই কি আমি যুদ্ধ করেছিলাম জানবাজি রেখে? নেতা বেঁচেছিলেন মাত্র ৫৫ বছর। কিন্তু শতবর্ষেও তিনি গৌরবদীপ্ত এক মহানায়ক। এখন আমাদের সবার কাজ সবার দায়িত্ব তাঁকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একক নেতা ও জাতির জনক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আমরা যেন সরকারের তরফ থেকে সে কাজের সূচনা দেখতে পাই। জয়তু বঙ্গবন্ধু।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে চাল ও অর্থ সহায়তা পাচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার পরিবার