আমাদের মায়া মমতার সমাজ এখন যৌনতা আক্রান্ত। কালোবাজারী লুটপাট আর দুর্নীতির আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে সামাজিক দিক। অথচ সে দিকটা ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিদেশেও আমরা এমন যথেচ্ছাচার দেখি না। স্কুল কলেজ থেকে গৃহবধু কেউ ছাড় পাচ্ছে না। বাচ্চাদের বিশেষ করে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে তটস্থ থাকতে হয় মাদের। মায়েরা সব আমলেই উদ্বিগ্ন থাকতেন কিন্তু এখন বিষয়টা সীমার বাইরে। উদ্বিগ্নতা কতো কারণে। মেয়েরা কোথায় নিরাপদ? বিদ্যালয় কলেজ বা গৃহকোণে কোথাও তার নিরাপত্তা নেই। হাতের মোবাইল বা প্রযুক্তিও হয়ে উঠেছে ভয়ানক বিপজ্জনক।
অথচ সমাজপতি নামে পরিচিতদের এ নিয়ে ভাবনা নেই। ভাবনা নেই রাজনীতিরও। আওয়ামী লীগ বিএনপি কারো সময় নেই। সময় না থাকার কারণও স্পষ্ট। তাদের অনেকেই এসব প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। দেখবেন কিছু ঘটলেই এদের নাম বেরিয়ে আসে। সরাসরি জড়িত না থাকলেও এদের ছাড়া আশ্রয় প্রশ্রয়েই ঘটে থাকে অপরাধ। আর অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যায় কথিত রাজনীতির নামে। তারপরও আমাদের সমাজের কোনো হেল দোল নেই ।
এমন এক পরিবেশ তৈরী হয়েছে মনে হবে দেশে রাজনীতির বাইরে সমস্যা বা সম্ভাবনা বলে আর কিছু নেই। থাকলেও গৌণ। এই রোগ এখন মহামারী। এনিয়ে বলতে চাই না। বলবো সামাজিক সমস্যার কথা। খেয়াল করবেন, আমরা যত-ই বলি না কেন রাজনীতিতে মিল নেই ঐক্য নেই, আসলে কিন্তু আছে। ভালো কাজে থাক বা না থাক খারাপে আছে। এত ধর্ষণ এত নারকীয় হত্যা এত ধরনের নারী নির্যাতন তারপরও কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের দিক থেকে দেশকাঁপানো কোনো প্রতিবাদ নেই। ক দিন আগে বাচ্চা একটি মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পূজা নামের এই শিশুটি আসলে একটি প্রতীক। সে জানিয়ে দিয়েছে আমাদের পুরুষরা এখন লিঙ্গপ্রধান। যৌনতার জন্য তারা শিশুকেও ছাড় দিতে রাজী না।
প্রতিবাদের জায়গাটা দিনকেদিন দুর্বল থেকে দুর্বল করেছি আমরাই। এক একটা ঘটনা বা দুর্ঘটনা আসলে কারো কারো জন্যে আশীর্বাদ। তাদের ডাক পড়ে নানা চ্যানেলে। কাগজে লিখে ওয়েবে লিখে হাইপ্রোফাইলের মানুষ হয়ে ওঠে কেউ কেউ। এত বিশ্লেষণ এত সারগর্ভ ভাষণ আর বাণী শুনতে শুনতে ক্লান্ত জনগণ পাশ ফিরে ঘুমায়। চেনা কিছু মুখ দু‘চারটে কাগজের ব্যানার আর হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে বলে, করেছিতো। মানববন্ধন করেছি। এই ধারাবাহিকতায় ধর্ষক বা হত্যাকারী বুঝে গেছে ওদের কেশ স্পর্শেরও সুযোগ নেই কারো। সমাজে এমন অসহায়ত্ব আগে দেখিনি আমরা। কোথায় সেই মানুষেরা? যারা বলবেন এত ধর্মাচারণ পোশাকে আহারে এতটা ধার্মিক হবার পরও কেন আজ এই দানবীয় পরিবেশ চারদিকে? কারণ না আছে প্রতিরোধ না রাজনীতির কোনো উদ্যেগ।
গণতান্ত্রিক সমাজ কি এই একপেশে আচরণ ও অভ্যাস অনুমোদন করে? তারা সরকারে আছেন বলে তাদের কোনো নেতা কখন কয়টায় টিভি ক্যামেরার সামনে হাজির হবেন, তার বাড়িতে কে তাকে মালা পরালো এসবও জানতে হবে দেশবাসীর? অন্যদিকে দেখুন আত্মমগ্ন সরকারি দলের ডিমের খোলস ভাঙ্গতে না পেরে মাইক্রোভফোন সামনে নিয়ে খালি নালিশ আর নালিশ। আরে বাবা আসোনা রাস্তায়। গ্রেফতার? সেতো সব আমলেই থাকে। তাছাড়া যদি নেমে আসো সামাজিক কারণে একসময় জনগণই পাশে এসে দাঁড়াবে। বিষয়টা সরকার বিরোধিতা না। বিরোধিতা হবে সামাজিক দস্যু খুনী ধর্ষকদের বিরুদ্ধে। কই সেভাবে তো কেউ আসে না। বাম দলগুলো একসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন। এখন? আওয়ামী লীগ ও সরকারের উপরি বিরোধিতার পর তাদের কাউন্সিলে যেতে পেরে আহ্লাদে আটখানা। এমন রাজনীতিকে মানুষ টা টা জানাবেনা তো কি চুম্মা দিয়ে ঘরে তুলবে?
মূলত সমাজ ও সামাজিকতা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারো। কিছু বললেই অমুক দেশ তমুক দেশের তুলনা করে বলা হবে এখনো আমরা ভালো আছি। এরকম হিসেব করলে একসময় আফ্রিকার জঙ্গল ছাড়া তুলনার আর কিছু থাকবে? কত নারী যে অপমানিত হচ্ছে প্রতিদিন। আমরা যেসব ধর্ষণ দেখছি সেগুলো ধরা পড়েছে বা জানাজানি হয়েছে। এর বাইরে? যানবাহনে ঘরে অফিসে কাজে কোথায় না ধর্ষিতা হচ্ছেন মেয়েরা? ফেইসবুক বা খোলা মিডিয়ার প্রলোভনে আধুনিকতার অন্ধকার দরজা খোলার কারণে বসগিরির দায়ে কিছু প্রাপ্তির প্রলোভনে এমনকি বাধ্য হয়েও তাদের মেনে নিতে হচ্ছে ধর্ষণ প্রক্রিয়া। অচিরে বন্ধ নাহলে সমাজের মেরুদণ্ড স্ক্রু দিয়েও টাইট রাখা যাবে না।
বলি, আগে নিজেকে সামলান। সবাই যার যার ঘরের দিকে নজর দিন। বাড়িতে সময় কাটান। যন্ত্র মিডিয়া মোবাইলের বাইরে আমাদের যে সামাজিক পারিবারিক জগত ছিল তার দিকে ফিরে তাকান। প্রতিরোধ গড়ুন। রাজনীতি সঙ্গ না দিলে তাকে উপযুক্ত জবাব দিন। আজ মুখ বন্ধ করে ভালো আছেন কাল থাকবেন তো?
নষ্ট সমাজ চরিত্রহীন মানুষের জগত কোনোদিন এগুতে দেবে না। আমরা শিশু থেকে বৃদ্ধা সব যৌন অনাচার ধর্ষণ ও নারকীয়তার বিচার চাই। কিনতু কার কাছে? যারা আগামী ভোটের জন্য দল গুছাতে ব্যস্ত তাদের কাছে? না যারা যেন তেন প্রকারে সরকারে আসতে সব ছাড় দিতে এক পায়ে খাড়া তাদের কাছে? জবাবটা কিনতু মানুষের ভেতরেই আছে। শুধু রুখে দাঁড়াচ্ছে না। আমরা কি তবে বোবা কালা জাতিতে রুপান্তরিত হয়ে গেছি?
আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন কী হচ্ছে শ্রীলংকায়। চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে অবকাঠামো খাতে একের পর এক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ও করে চলেছে শ্রীলঙ্কা। এসব প্রকল্প থেকে আয় এসেছে সামান্যই। কিন্তু চীনের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অর্থনীতিতে নেমে এসেছে বিপর্যয়। তুমুল জনরোষের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপকসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, চীনা ঋণের প্রকল্প ও তা বাস্তবায়নের ফাঁদেই কি ফেঁসে গেলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে?
শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় হামবানটোটা জেলায় প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবার বসবাস করে। সেখানেই চীনা ঋণে বানানো হয়েছে গভীর সমুদ্রবন্দর। ওই বন্দরের আয় দিয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি আরও চাঙা হয়ে উঠবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বন্দর নির্মাণের ১৪০ কোটি ডলারের চীনা ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ছয় বছরে ৩০ কোটি ডলার হারিয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালে বন্দরটি একটি চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির কাছে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দেয় শ্রীলঙ্কা। এর ফলে চীনা অর্থে নির্মিত বন্দর শেষ পর্যন্ত চীনের হাতে চলে যায়।
চীনের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার ঋণ নিয়ে একটি সম্মেলেন কেন্দ্র বানিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। সেটিও অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। হামবানটোটা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ২০ কোটি ডলারের চীনা ঋণে বানানো হয়েছে রাজাপাকসে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তবে বিমানবন্দরটি এখন বিদ্যুৎবিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
এসব মিলে মিশে এখন সেখানে খোদ প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীও পালিয়ে বাঁচতে পারছেন না । সামাজিক অসন্তোষ কখন কি কারণে কোথায় ফুঁসে উঠবে কেউ জানে না। আমাদের সাবধানতা এখন জরুরি। সমাজ বাঁচলে সমাজ নিরাপদ থাকলেই দেশ নিরাপদ।
লেখক : সিডনি প্রবাসী কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট