দুর্নীতির বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন

| সোমবার , ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:২১ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতিকে যতই আমরা না বলি, ততই যেন আমাদের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। দুর্নীতি সবাইকে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। দেশে এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতির অশুভ থাবা প্রভাব বিস্তার করেনি। প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে উঁকি দিচ্ছে, চোখ পাকাচ্ছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। কেবল অভাবের তাড়নায় মানুষ দুর্নীতি করেএটি সত্য নয়। বিত্তশালী কর্মকর্তা বা ব্যক্তি আরো অর্থ সম্পদের জন্য দুর্নীতি করে। মানুষের মধ্যে নীতিনৈতিকতার ঘাটতি হলেই দুর্নীতি জেঁকে বসে। দুর্নীতির দুষ্টচক্র দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট বাধা হিসাবে কাজ করছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকর্মচারীদের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার জন্য সরকার বেতনভাতা বৃদ্ধি করলেও তা না কমে বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী এ কনভেনশন বা সনদে বলা হয়েছে যে, দুর্নীতি সমাজের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, গণতান্ত্রিক কাঠামো, নৈতিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারকে ক্ষুণ্ন করে এবং টেকসই উন্নয়ন ও আইনের শাসনকে বিপন্ন করে। সুতরাং এ কনভেনশনকে দক্ষতার সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তিগত সহায়তা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সারা বিশ্বের সরকার, বেসরকারি সংস্থা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যম ও সাধারণ নাগরিকরা প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দিবস’ হিসেবে পালন করে।

অনেকেরই অভিযোগ, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন তেমন কার্যকর নয়। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। তবে বিশ্লেকরা বলেন, দুদকের পক্ষে সারা দেশের সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তাছাড়া সারা দেশের দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণও দুদকের কাছে নেই। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতির অনুসন্ধানের জন্য ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ সৃষ্টি হলেও পরবর্তী সময়ে কমিশনের জন্য প্রণীত আইনে দুদকের অধিক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় জনবল ও অফিস বিস্তৃতি হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকলেই কেবল দুদক কাজ করতে পারে।

সম্প্রতি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, “দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাহাড়সম অভিযোগ জমা পড়েছে। স্বাধীন সংস্থাটিতে ২০২২ সালে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর ৬১ ভাগ সরাসরি দুদক কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী মানুষ। সাত উৎস থেকে আসা অভিযোগের শতকরা ৯৬ ভাগই আমলে নেওয়া হয়নি। অভিযোগের পরিসংখ্যানই স্পষ্ট করে দিচ্ছেদুর্নীতি দমনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নানা হুঁশিয়ারি, হুমকিধমকি কাজে আসছে না। দেশের মানুষকে জাঁতাকলের মতো চেপে ধরেছে দুর্নীতির দুষ্টচক্র। সক্রিয় এ চক্রকে দমাতে প্রতিষ্ঠানটি তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদক আইনে মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে শত্রুতার কারণে বা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অনেকে কমিশনে অভিযোগ জমা দিয়ে থাকেন, যা পর্যবেক্ষণ ও যাচাইবাছাইকালেই ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। ফলে এ ধরনের অভিযোগ শুরুতেই বাতিলের খাতায় চলে যায়। তবে এর আগেই পরিকল্পিতভাবে কৌশলে দুদকে অভিযোগের বিষয়টি রং মিশিয়ে প্রচার করে দেওয়া হয়, যা নিরাপরাধ ওই ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অভিযোগকারীকে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। আইনে এ বিধানটি যুক্ত করার দাবি জানান তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক বলেন, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসাবে দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন নানা সোর্স থেকে দুদক কার্যালয়ে অভিযোগ জমা পড়ে। সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ, যাচাইবাছাই শেষে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে জমা পড়া অনেক অভিযোগ তফশিলভুক্ত না থাকায় অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া যায় না।”

তবু দুর্নীতিবাজদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে করে দুর্নীতি করার আগে যেন একবার ভেবে দেখে এর পরিণতি কী হতে পারে।

দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণকেও এ ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে