দুর্দান্ত জয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

চোকার্স অপবাদ ঘুচলো না দক্ষিণ আফ্রিকার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ আফ্রিকার ‘চোকার্স’ অপবাদ বুঝি আর গেল না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইডেনে এ কথা আরও এক বার সত্যি হয়ে গেল। ‘চোকার্স’ তকমা মুছে ফেলতে পারল না টেম্বা বাভুমার দল। বিশ্বকাপের শুরু থেকে দারুণ ফর্মে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু সেমি ফাইনালের অর্ধেকটা সময় ঠিক চেনা গেল না তাদের। দুর্দান্ত ম্যাচে জিতে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের সামনে তাই অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে তারা। তবে যতটা সহজে অস্ট্রেলিয়া সেমি ফাইনাল জিতবে বলে মনে করা হয়েছিল ম্যাচের প্রথমার্ধে ততটা সহজ হল না। ইডেন গার্ডেন্সের মন্থর হয়ে যাওয়া উইকেটে যথেষ্ট খেটে জিততে হল তাদের। আর পাঁচ বার বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে উঠে পাঁচ বারই হারল দক্ষিণ আফ্রিকা। ইডেনের আকাশে গতকাল মেঘ থাকলেও টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন বাভুমা। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করে তুলতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। ২১২ রানেই শেষ হয়ে গেল তাদের ইনিংস। ডেভিড মিলার ১০১ রানের লড়াকু ইনিংস না খেলতে পারলে এবং হেনরিক ক্লাসেন ৪৭ রান না করলে বড় লজ্জায় পড়তে হত দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

দলের ইনিংসের ধস শুরু অধিনায়ক বাভুমাকে দিয়েই। কোন রান করতে পারেননি তিনি। অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলেন কুইন্টন ডি’কক। পুরো টুর্নামেন্টে ছিলেন দারুণ ফর্মে। কিন্তু সেমি ফাইনালে ডি’ককও () পারলেন না। ব্যর্থ তিন নম্বরে নামা ভ্যান ডার ডুসেনও ()। ভরসা দিতে পারলেন না এডেন মার্করামও (১০)। জস হ্যাজলউডদের দাপটে ১১.৫ ওভারে ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১০ ওভারে রান ছিল ২ উইকেটে মাত্র ১৮। যা শেষ চারটি বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে যুগ্ম দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান। ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের হাল ধরেন হেনরিখ ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলার। পঞ্চম উইকেটের জুটিতে তারা দু’জনে তোলেন ৯৫ রান। সামান্য বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হলে কিছুটা স্বস্তি ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে। এই জুটিতেই যেন অঙিজেন পায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। ৪৮ বলে ৪৭ রান করেন ক্লাসেন। মারেন ৪টি চার এবং ২টি ছয়। তার আগ্রাসী ব্যাটিংই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তবে দলকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দেয় মিলারের দায়িত্বশীল শতরানের ইনিংস। ১১৬ বলে ১০১ রান করেন ৮টি চার এবং ৫টি ছয়ের মাধ্যমে। তার ব্যাটে ভর করেই ২০০ রানের গন্ডি পার করে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের পরের আর কোনও ব্যাটার বলার মতো রান পাননি। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসও বেশি দূর এগোল না। অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার মিচেল স্টার্ক ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিলেন। তবে কৃপণতম ছিলেন হ্যাজলউড। তিনি ১২ রানে ২ উইকেট নেন। অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ৩ উইকেট পান ৫১ রান খরচ করে। ২১ রানে ২ উইকেট নিলেন ট্র্যাভিড হেডও। এক দিনের ক্রিকেটে ২১৩ রানের লক্ষ্য তেমন বড় নয়। ছোটই বলা চলে। তবু ইডেনের ২২ গজে সেই রান খুব সহজে তুলতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। দুই ওপেনার অবশ্য ইনিংস শুরু করেন আগ্রাসী মেজাজে। ৪৮ বলে ৯টি চার এবং ২টি ছয়ের সাহায্যে ৬২ রান করলেন হেড। ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে এল ১৮ বলে ২৯ রানের ইনিংস। ১টি চার এবং ৪টি ছয় মারলেন তিনি। মার্করাম এবং কেশব মহারাজ দুই ওপেনারকে পর পর দু’ওভারে আউট করতেই চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। সেই চাপ সঙ্গী হল পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের গোটা ইনিংসে। তিন নম্বরে নেমে ব্যর্থ হলেন মিচেল মার্শ। কোন রান আসেনি তার ব্যাট থেকে। দলকে তেমন ভরসা দিতে পারলেন না স্টিভ স্মিথ (৬২ বলে ৩০), মার্নাস লাবুশেন (৩১ বলে ১৮), গ্লেন ম্যাঙওয়েলরা ()। শেষ দিকে লড়াই করলেন জশ ইংলিস। তাকে সঙ্গ দিলেন স্টার্ক। জেরাল্ড কোয়েৎজের বলে আউট হওয়ার আগে ইংলিস করলেন ৪৯ বলে ২৮ রান। তিনি আউট হওয়ায় ১৯৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় অসিরা। ইংলিস আউট হওয়ার পর স্টার্কের সঙ্গে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যান অধিনায়ক কামিন্স। কয়েক বার বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হলেও ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। স্টার্ক এবং কামিন্স অস্ট্রেলিয়াকে অষ্টম বারের জন্য বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলে দিলেন। শেষ পর্যন্ত স্টার্ক অপরাজিত থাকলেন ৩৮ বলে ১৬ রান করে। কামিন্সের ব্যাট থেকে এল ২৯ বলে অপরাজিত ১৪ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়া ১৬ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে ২১৫ করে নেয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারেরা ইডেনের মন্থর উইকেটের সুবিধা যথাসাধ্য কাজে লাগিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি। অসি ব্যাটারদের বার বার সমস্যায় ফেলেও লাভ হয়নি। সেমিফাইনালে প্রত্যাশিত মানের হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার ফিল্ডিংও। বেশ কয়েকটি ক্যাচ ফেললেন বাভুমারা। তার মধ্যে একাই দুটি ফেললেন উইকেট রক্ষক ডি’কক। দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার তাবরেজ শামসি ৪২ রানে ২ উইকেট নেন। ৪৭ রানে ২ উইকেট কোয়েৎজের। ১টি করে উইকেট নিলেন কেশব মহারাজ, কাগিসো রাবাদা এবং মার্করাম। ম্যাচ সেরা হন অস্ট্রেলিয়ার ট্রেভিস হেড। ২১ রানে ২টি উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৪৮ বলে ৬২ রান তাকে এ পুরস্কার এনে দেয়। আগামী ১৯ নভেম্বর ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত হবে এই ফাইনাল খেলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ চলবে ১ ডিসেম্বর থেকে
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে যুবককে গুলি করে হত্যা