দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি দক্ষ চালক প্রয়োজন

| শুক্রবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনার কোনো না কোনো খবর দেখা যাবে পত্রপত্রিকায়। এতো প্রচার প্রচারণার পরও দুর্ঘটনা হ্রাস পাচ্ছে না। জনসাধারণও সচেতন হচ্ছে না। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবমতে, সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে; আর দুর্ঘটনার কারণে প্রতিদিন গড়ে আহত হচ্ছে ১৫০ জনেরও অধিক মানুষ। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণে বছরব্যাপী লকডাউনে পরিবহন তেমনভাবে না চললেও ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত আর ৮ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। এমনই বাস্তবতায় প্রতি বছর ২২ অক্টোবর সরকারি উদ্যোগে জাতীয়ভাবে পালন করা হয় নিরাপদ সড়ক দিবস। সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে যাত্রী, চালকসহ জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনকানুন মেনে চলার বিষয়ে সকলকে উদ্বুদ্ধ করবার লক্ষ্যেই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু দিনদিন যেভাবে সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে, দুর্ঘটনায় আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মানুষের সচেতনতার বিষয়টি এবং সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এখানে উল্লেখ করতে পারি, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের জন্ম আজ থেকে ২৮ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে হারিয়ে এ আন্দোলন গড়ে তোলেন। ২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেদিন থেকে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে। এ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করার জনদাবি জোরেশোরে উচ্চারিত হয় প্রতিবছর।
আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে যেই সকল কারণকে দায়ী করা হয় তার মধ্যে রয়েছে-চালকের অসতর্কতা, জনসাধারণের অসচেতনতা, বেপরোয়া কিংবা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেকিং, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ইত্যাদি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সড়কে প্রতিদিন দুর্ঘটনার বিষয়টি এতটাই গা-সওয়া ব্যাপারে পরিণত হয়েছে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল কেউই যেন বিষয়টির গভীরতা অনুধাবন করতে পারেন না। অথচ অন্য বিশেষ কোনো ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনায় দিনে যদি ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করতো, তাহলে দেশে বিশেষ সতর্কতামূলক অবস্থা জারি করবার উপক্রম হতো। আমাদের গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি কোনো মহামারির তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল দুর্ঘটনা রোধে একটি সময়োপযোগী সড়ক পরিবহন আইন করার। দাবি অনুযায়ী আইনও হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। কেননা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তেমন কঠোর শাস্তির নজির নেই। বলা বাহুল্য, সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এ সংক্রান্ত কমিটি ১১১টি সুপারিশ করেছিল, যেগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন ২০১৮ সালের জুনে। নির্দেশনাগুলো হলো- দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখা, একজন চালকের পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো, চালক ও তার সহকারীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি করা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা বা সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবহার এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করা। এসব নির্দেশ যাতে বাস্তবায়িত হয়, তা দেখতে তিনজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর যৌক্তিক নির্দেশনাগুলোরও যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সুপারিশ করা হলেও তা কখনো বাস্তবায়িত হয় না। যত কথাই আমরা লিখি না কেন, তা প্রতিনিয়ত অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে। ফলে দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ যেমন জরুরি, তেমনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক অবশ্যই প্রয়োজন। তবে পাশাপাশি জনগণকেও হতে হবে সচেতন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে