অবশেষে দুঃখ ঘুচতে যাচ্ছে রাঙামাটির দুর্গম বিলাইছড়ি, বরকল ও জুড়াছড়ির কয়েক হাজার পরিবারের। এতদিন লো-ভোল্টেজের কারণে এই অঞ্চলের অধিবাসীরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা হতে বঞ্চিত হয়ে আসছিল।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে একটি সাব স্টেশন নির্মিত হয়েছে।
আজ সোমবার (১২ জুলাই) বিকেল ৩টায় পরীক্ষামূলকভাবে এই উপ-কেন্দ্রটি চালু করা হয়। এইসময় প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জ্বল বড়ুয়া, বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান, প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুর রহমান, রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার, এনার্জি অডিটিং ইউনিট এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান, সিস্টেম প্রটেকশন-এর নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর হাসান ভুঁইয়া, কাপ্তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী আশফাকুর রহমান মুজিব, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. রফিকুল হাসান রাকিব সহ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল বড়ুয়া জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ৫শ’ ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়। তারই একটি প্রকল্প হচ্ছে বিলাইছড়ি ৩৩/১১ কেভি ৫ এমভিএ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র।
এটা চালু হবার ফলে এই দুর্গম তিনটি উপজেলার জনসাধারণ এখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সহ ভালো ভোল্টেজের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে।
তিনি আরোও জানান, পূর্বে লো-ভোল্টেজের কারণে এই সব অঞ্চলের জনগণ বিদ্যুৎ ব্যবহারে সমস্যায় পড়ত বিশেষ করে গৃহস্থালী কাজে ব্যবহত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে তারা পারত না। এখন সেই সমস্যা থাকবে না। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে এই বিদ্যুৎ লাইন এবং উপকেন্দ্র নির্মাণে অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এডেক্স কর্পোরেশন লিমিটেড বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকরা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এই দুরুহ কাজটি সম্ভব হয়েছে।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান জানান, বিলাইছড়ি উপজেলার উন্নয়নে মাইলফলক হয়ে থাকবে এই সাব স্টেশন। এই কেন্দ্র চালুর ফলে বিলাইছড়ি সহ আরো ২টি উপজেলার জনগণ এখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাবেন।
তিনি জানান, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকারের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎতায়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বিলাইছড়িবাসীর জন্য বড় পুরস্কার।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী আশফাকুর রহমান মুজিব জানান, আগে কাপ্তাই হতে ১১ হাজার লাইনের মাধ্যমে তিন উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। এখন থেকে নতুন ৩৩ হাজার ভোল্টের লাইনের মাধ্যমে বিলাইছড়ি উপজেলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে জনগণ মানসম্মত বিদ্যুৎ পাবে যা বর্তমান সরকারের মুজিব বর্ষ উপলক্ষে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ উপহার।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এডেক্স কর্পোরেশন লিমিলেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. রফিকুল হাসান রাকিব বলেন, “গত ২০১৮ সালের জুন হতে আমরা প্রকল্পের কাজ শুরু করি। তারপরও করোনা সহ নানা প্রতিকূলতার মাঝে আমাদের কর্মীরা নিরলস পরিশ্রম করেছেন। সেইসাথে প্রকল্প দপ্তরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেছে।”
বিলাইছড়ি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন বড়ুয়া বলেন, “আগে বিলাইছড়িবাসীর দুঃখ ছিল বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং এবং লো-ভোল্টেজ। আমরা আশা করছি এই উপকেন্দ্র চালুর মাধ্যমে আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাব।”
বিলাইছড়ি উপজেলার ধুপ্যাছড় এলাকার কার্বারী উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থুইপ্রু মারমা আকাশ বলেন, “আমরা সবসময় বিদ্যুৎ নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতাম। বিদ্যুৎ যাওয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল লো-ভোল্টেজ। আশা করছি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের দুঃখ ঘুচাবে।”












