দেশে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মোট মৃত্যু পৌঁছে গেছে নয় হাজারের কাছাকাছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫ হাজার ৪২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে আরও ৪৫ জনের।
এদিকে গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়ছে। এই মুহূর্তে অন্তত ২৯টি জেলা করোনার উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুর, নীলফামারী, সিলেট, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মাদারীপুর, নওগাঁ, রাজশাহী ইত্যাদি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের বলেন, গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে এবং সংক্রমণের মাত্রা খুব দ্রুত বাড়ছে। তিনি বলেন, মার্চের ১৩ তারিখে সংক্রমণের মাত্রা উচ্চ ছিল ৬টি জেলায়। ২০ তারিখে দেখা গেছে ২০টি জেলা ঝুঁকিতে আছে। মার্চের ২৪ তারিখে দেখা গেছে সংক্রমণের হার উচ্চ এমন জেলার সংখ্যা ২৯টি। তিনি জানান, প্রতি জেলায় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কমিটি রয়েছে। এসব কমিটি স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে মিলে সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য একসঙ্গে কাজ করবে। খবর বিডিনিউজ ও বিবিসি বাংলার।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জনে। গত একদিনে মারা যাওয়া ৪৫ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় মোট ৮ হাজার ৯৯৪ জনের মৃত্যু হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ১৬২ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৮০ জন হয়েছে। বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। এক বছর পর সোমবার প্রথমবারের মতো একদিনে ৫ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের খবর আসে। এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর আগে গত বছরের ২ জুলাই মোট ৪ হাজার ১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সোমবারের আগে সেটাই ছিল একদিনে শনাক্ত রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা।
গত বছরের ৩০ নভেম্বরের পর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে সংক্রমণের হার ধারাবাহিকভাবে কমছিল। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে দৈনিক শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে।
দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ হতে ৭৭ দিন সময় লেগেছিল। তা ছয় লাখে পৌঁছাতে সময় নিয়েছে মাত্র ২২ দিন। গত দুদিন ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজারের উপরে থাকার পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হারও থাকছে ১৮ শতাংশের বেশি, যা গত ২৪ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১ মার্চ তা সাড়ে আট হাজার ছাড়িয়ে যায়।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১২ কোটি ৭৬ লাখ পেরিয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৭ লাখ ৯২ হাজার। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৪০তম অবস্থানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২২৪টি ল্যাবে ২৬ হাজার ৬২০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
গত একদিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২৮ জন পুরুষ আর নারী ১৭ জন। তাদের প্রত্যেকেই হাসপাতালে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ৩৭ জন ঢাকা বিভাগের, ৩ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ২ জন রাজশাহী বিভাগের, ২ জন খুলনা বিভাগের এবং ১ জন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৮ হাজার ৯৯৪ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৭৭৪ জন পুরুষ, নারী ২ হাজার ২২০ জন।