দুদিনে কক্সবাজার সৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন

উচ্চ জোয়ার

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে গত দুদিনে বিলীন হয়েছে কক্সবাজার সৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনেই বিলীন হয়ে গেছে শহরের লাবণী, শৈবাল ও ডায়বেটিক পয়েন্টসহ বিস্তীর্ণ সৈকতের বালিয়াড়িসহ ঝাউবন।
গতকাল শুক্রবার সকালের জোয়ারে বিলীন হয়ে গেছে আরো কয়েকটি এলাকা। ভাঙনের কারণে ঝুঁকির মুখে সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার সকালে সৈকতের ভাঙন পরিদর্শন করেছেন।
গত দুইদিন ধরে কক্সবাজার উপকূলে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় ১ থেকে ২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। জোয়ারের সাথে উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে কক্সবাজার উপকূলে। ঢেউয়ের তোড়ে হারিয়ে গেছে শহরের কলাতলী শুকনাছড়ি সাগরতীরের অন্তত ১৫টি বসতবাড়ি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, কক্সবাজার সৈকতে ভাঙনের এত তীব্রতা গত কয়েক বছরেও দেখা যায়নি। গত বছরও সৈকতে বেশ ভাঙন দেখা দিয়েছিল এবং ঝাউবনসহ সৈকতের বহু জমি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। আর বৃহস্পতিবার ঢেউয়ের তোড়ে একদম চোখের সামনেই ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ বক্সটি পড়ে যাচ্ছিল। কোনো মতে ঘরটি সাগরে বিলীন হওয়ার আগেই সরিয়ে রক্ষা করা হয়েছে।
সৈকতের লাইভ গার্ড কর্মী মাহবুব আলম বলেন, এ বছরের মতো সৈকতে ভাঙনের তীব্রতা আগে চোখে পড়েনি। ভাঙনের কারণে কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় পর্য়টকদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে ট্যুরিস্ট পুলিশ ভবন, সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চ, ছাতা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকীর মুখে পড়বে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, লঘুচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি বৃষ্টিপাত ও দমকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে চলছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দু-চার ফুট বেড়েছে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছধরার ট্রলারকে পরবর্তী সংকেত না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার শুক্রবার সকালে সৈকতের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, সৈকতের ভাঙন রোধে শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে নুনিয়াছড়া নাজিরারটেক পর্যন্ত কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে রয়েছে।
পাউবো সূত্র মতে, সৈকতের ভাঙন রোধে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫-১৬ মিটার এলাকায় জিও টিউব দিয়ে অস্থায়ী মেরামত কাজ করে। এরপর ২০২১ সালে সৈকতের ভাঙন রোধে সীমিত আকারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ জানান, মূলত গত কয়েক বছর থেকেই সৈকতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সৈকতের ডায়বেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে ভাঙছে। তা রোধে প্রাথমিকভাবে সৈকতের কবিতা চত্বর পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশে জিও ব্যাগ বসানো হয়েছে। তবে ভাঙন রোধের স্থায়ী সমাধান নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা সাগরের ভাঙন পরিদর্শন করেছি। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্তানকে বিক্রির জন্য বাজারে তুললেন মা!
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপিকে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না : তথ্যমন্ত্রী