দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো ব্যাধি। দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে না পারলে দেশে সত্যিকারের উন্নতি সম্ভব নয়। তাই ছেলেমেয়েদের সততার শিক্ষা ছোট বয়সেই দিতে হয়। ছোট বয়সে অর্জিত সুশিক্ষা এবং দুর্নীতিবিরোধী সততার শিক্ষা ভবিষ্যতে সৎ ও সাহসী জীবন গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। শিশুরা ঘুষ নেয় না, অন্যায় করে না। তারা নিজের বাবা মাকেও সৎ–আদর্শবান দেখতে চায়।
গতকাল সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়াম চত্বরে দুদক চট্টগ্রাম আয়োজিত সততা সংঘের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ছোটদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করতে হবে। সততা কঠিন কাজ হলেও কঠিনকে ভালোবাসতে হবে। সময় নষ্ট করা যাবে না। দুর্নীতি দমন দুদকের একার কাজ নয়। দুদকের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দুদকের সারাদেশে ১২শ জনবল রয়েছে। এত অল্প জনবল নিয়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশের দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের সীমাবদ্ধতা দূর করতে সততা সংঘ, সিভিল সোসাইটিসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত করার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব।
দুদক কমিশনার বলেন, সততা সংঘের এ কাজটি দুদক কেন করছে? আমরা শিশুমনে চিন্তার খোরাক দিতে চাই। কথায় আছে ত্রিশে বিদ্যা, চল্লিশে ধন। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে হবে। উন্নত দেশে ঘর ভাড়া নিতে গেলে বেতন কত জানতে চাওয়া হয়। আমাদের দেশে বেতন পায় বিশ হাজার, ঘর ভাড়া পঁচিশ হাজার। পৃথিবীর দুর্নীতিমুক্ত সকল দেশই সমৃদ্ধ দেশ। এসব দেশে দুর্নীতির পরিমাণ অনেক কম। আইন দিয়ে দুর্নীতি দমন করা কঠিন। মানুষের নৈতিক চরিত্র পরিবর্তন করতে হবে। সেই সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, দুদক কোনও শ্রেণী পেশার মানুষকে টার্গেট করে তদন্ত করে না। দুদক সব ধরনের এমনকি সাধারণ মানুষের অবৈধ উপার্জনের বিষয়েও তদন্ত করে থাকে। ওসি প্রদীপের সম্পদের তথ্য চেয়ে ৭টি দেশে চিঠি পাঠানোর প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ওসি প্রদীপের মামলা চলমান রয়েছে। মামলার রায়ও হয়েছে। তার সম্পদের নিশানা খোঁজার জন্য বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা দরকার হয়। ৭টি দেশে আমরা পত্র আলাপ করেছি। সেটা বেশিদিন হয়নি, মাত্র এক মাস হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই তার একটি জবাব আমরা পাবো। এখনো কোনো উত্তর পাইনি আমরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) মো. শহীদুল আলম বলেন, সততা সংঘের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সচেতন হবে এবং গণসচেতনতা তৈরি করবে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে দুর্নীতি। বাবার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে সন্তান প্রশ্ন করবে। মা–বাবার প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো যাবে না।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ দুইটি কাজ করে দুদক। আমরা মনে করি, তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে। আইন প্রয়োগ করে দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব নয়। সামাজিক আন্দোলন দরকার। তাই আমরা ২৭ হাজার ৬২৯টি সততা সংঘ করেছি।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেকোনো মূল্যে জয়ী হওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরাজিত হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। জীবনে শর্টকাট পথে সাফল্য আসে না। সৎ থাকতে পারা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। সৎপথে চলা কঠিন। সেই কঠিনকে ভালোবাসতে হবে।
মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা সৎ নাগরিক হয়ে দেশ পরিচালনা করবে। তোমরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমরা পারবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ফয়সাল মাহমুদ, অতিরিক্ত ডিআইজি প্রবীর কুমার রায়, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম সফিউল্লাহ, সততা সংঘের পরামর্শক মোস্তফা হাসান মজুমদার, দুদকের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান প্রমুখ।












