প্রথমে মিথ্যা মামলা, এরপর মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ও মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান। এর জেরে ১৪ বছরের নিরপরাধ এক কিশোরকে একমাস ছয়দিন জেলও খাটতে হয়। বাদী ও তদন্তের দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করেছেন চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে তিনি এ অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযুক্তরা হলেন নগরীর পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন ও এসআই সুবীর পাল।
দাখিলকৃত অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন বিচারক। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপি খন্দকার আরিফুল আলম আজাদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুল্ক পরিশোধ করা দুটি সোনার বার বহন করে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছিল স্কুল পড়ুয়া এক কিশোর। পথে তার কাছ থেকে একটি সোনার বার চেয়ে না পেয়ে মামলা করেন এসআই আনোয়ার হোসেন। পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেনকে রক্ষা করতে যাচাই বাছাই ছাড়াই কিশোরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার আইও এসআই সুবীর পাল। তারও পরে ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে দুজনই কিশোরের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন। এতে ওই কিশোরকে ১ মাস ৬ দিন জেল খাটতে হয়। জঘন্য এ অপরাধের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৭৬ ধারা অনুযায়ী বিচারক দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগটি করেন এবং উক্ত ধারার বিধান অনুযায়ী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক। এমন ঘটনা বিরল হলেও আইনি ভিত্তি রয়েছে। যার কারণে বিচারক নিজে মামলাটি করেন।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দুটি সোনার বার বহন করার অভিযোগে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার বাটারফ্লাই পার্ক থেকে এক কিশোরকে আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এসআই আনোয়ার হোসেন একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করেন এসআই সুবীর পাল। তদন্ত শেষ করে একই বছরের ৩ অক্টোবর ওই কিশোরের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলার বিচার চলাকালে গত ১১ এপ্রিল দুই পুলিশ কর্মকর্তা ওই কিশোরকে দায়ী করে সাক্ষ্য দেন।
ওই মামলার বিচার চলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরার আদালতে। এ বছর ৪ সেপ্টেম্বর তিনি মামলাটি খারিজ করে দিয়ে বলেন, শুল্ক পরিশোধের কাগজ থাকার পরও মিথ্যা মামলা করেছিল পুলিশ। তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষ্যও ছিল মিথ্যা। বিচারক ফেরদৌস আরাই মঙ্গলবার নিজে বাদী হয়ে দুই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দয়ের করলেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, ভিকটিম কিশোরটির আত্মীয় এ এইচ এম সুমন দুটি সোনার বার বাহরাইন থেকে নিয়ে আসলে বিমানবন্দরে ব্যাগেজ পরিদর্শক বারসহ সুমনকে আটক করে। পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক শুল্ক পরিশোধ করে সোনার বার দুটি নিজ হেফাজতে নিয়ে ওই কিশোরের কাছে হস্তান্তর করলে খবর চলে যায় পুলিশের কাছে। পুলিশ সোনার বারসহ ওই কিশোরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং বার দুটির একটি দাবি করে। তা দিতে ওই কিশোর অস্বীকৃতি জানালে মামলা দেয়া হয়। যদিও এর আগে শিশুর মা জব্দকৃত সোনার বারের বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করেন।