দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব থেকেই মারামারি

ইভানের পিতার মামলা জড়িতরা শনাক্ত, গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান ।। চেরাগী মোড়ে খুন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে কিশোরদের দুই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং হতাহতের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হয়েছে গ্রুপ দুটির একটি সৈকত দাশ গ্রুপের সদস্য শোভন। সংঘর্ষে তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম।

এ ঘটনায় নিহত আসকার ইবনে তারেক ইভানের (১৮) পিতা এসএম তারেক গতকাল শনিবার সকালে বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল সিএমপির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিএমপির কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমার কাছে প্রথম যে বিষয়টি আশ্চর্য লেগেছে, তা হলো চেরাগী পাহাড় এলাকায় এত বড় একটি ঘটনা ঘটে গেল, কেউ আমাদের জানায়নি। ৯৯৯-এ ফোন করলেও তো হতো। মানুষ এতটা নিশ্চুপ কীভাবে থাকতে পারে? খবর পেয়ে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে একজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হই। ঘটনায় জড়িতদের আমরা মোটামুটি আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি। তাদের গ্রেপ্তারে দুটি বিশেষ টিম অভিযান চালাচ্ছে।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, নিহত ইভানের পিতা আসামিদের নাম জানতেন না। আমরাই শনাক্ত করেছি তাদের। আশা করছি, অচিরেই আপনাদের সুখবর দিতে পারব। তিনি বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে স্থানীয় দুই গ্রুপ কিশোরের মধ্যে প্রায়ই লেগে থাকে বিবাদ ও মারামারি। এর জের ধরে গত শুক্রবার রাতে চেরাগী পাহাড় মোড়ে আবার মারপিটে জড়ায় তারা। এ সময় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় ইভান। ইভান বিএএফ শাহীন কলেজের দ্বাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী।

ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরের অনুসারী ইভানসহ কয়েকজনের সাথে সৈকত গ্রুপের ধ্রুবসহ কয়েকজনের ‘ঝামেলা’ হয়। হোটেলে সিটে বসা নিয়ে মারামারি বাঁধে ইভান ও ধ্রুবর মধ্যে। এ সময় ইভান ধ্রুবকে মারধর করে এবং তার গায়ে চেয়ার ছুঁড়ে মারে। ঘটনার দিন অর্থাৎ শুক্রবার জামালখান সেন্ট মেরিস স্কুলের সামনে সাব্বির গ্রুপের অমিতকে পেয়ে মারধর করে সৈকত গ্রুপের ধ্রুব, প্রান্ত, শোভনসহ অন্যরা। এর মধ্যে অমিতের ফোন পেয়ে ছুটে আসে ইভানসহ তার বন্ধুরা। জানতে পারে সৈকতের গ্রুপটি তখন অবস্থান করছে আন্দরকিল্লায়। ওরা আন্দরকিল্লা যায়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা চেরাগীর দিকে চলে আসে। আজাদী অফিসের পেছনে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে। উভয় গ্রুপ ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চেরাগী পাহাড় সংলগ্ন রাজাপুর লেইনে দয়াময়ী ভবনের সামনে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ইভান। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুরুতে ইভানকে চেরাগীর মোড়ের আজাদী গলি সংলগ্ন রাজাপুকুর লেইনের ভেতরে কয়েক দফা ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাকে চেরাগী পাহাড়ের মুখে এনে পুনরায় পেটানো হয়।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, রহমতগঞ্জ এলাকার সাব্বির সাদিক নিজেকে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা দাবি করে এলাকায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। তার অনুসারী কিছু কিশোর-তরুণ রয়েছে, যারা বিভিন্ন এলাকায় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে সৈকতের গ্রুপটি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের অনুসারী। তবে উভয় গ্রুপই মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের রাজনীতি করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআড্ডার জায়গা এখন বখাটেদের দখলে
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির বেশিরভাগ বক্তব্য বানোয়াট