বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১১ দফা দাবিতে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে বিক্ষোভ করেছেন কনস্টেবল থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। গতকাল বিকেলে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিকেলে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে জড়ো হয়ে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করেন কনস্টেবলরা। পরে সেখানে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এসে যোগ দেন। বিক্ষুব্ধরা এসময় আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ (ডিবি হারুন), মনিরুল ইসলাম ও বিপ্লব সরকারদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং পদোন্নতি ও পদায়নে বৈষম্য চলবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গত ক’দিনের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে এই সময় বিক্ষোভরতদের কয়েকজনকে কাঁদতে দেখা গেছে। তারা দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে হামলার ঘটনার বর্ণনা দেন।
পুলিশ সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুই দিন ধরে সিএমপি কমিশনার কর্মস্থলে নেই। সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানায় হামলার ঘটনায় কতজন পুলিশ সদস্য হতাহত হয়েছেন তারও কোনো হিসাব বা তালিকা তাদের কাছে নেই। সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখতে গেলে কনস্টেবলদের অনেককেই উত্তেজিত হয়ে ঘটনার সময় তারা কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্ন করতে থাকেন। তবে অন্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে যায়।
পরে বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যরা ১১ দফা দাবি ঊর্ধ্বতনদের কাছে দেন। দাবিগুলো হচ্ছে, চলমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যা ও পুলিশি স্থাপনায় হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা, নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন সহায়তা ক্ষতিপূরণ প্রদান, আজীবন পেনশন–রেশন প্রাপ্তি এবং পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, পিএসসির অধীনে এসআই, সার্জেন্ট নিয়োগ এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, এসআই/সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, সহকারী কমিশনার (এএসপি) পদে ৩০ শতাংশ সরাসরি ও পরিদর্শক পদ থেকে ৭০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া কনস্টেবল, নায়েক, এটিএসআই এবং এএসআই পদোন্নতির ক্ষেত্রে পাসকৃতদের সিনিয়রিটি অনুসরণ ও পরের বছর পুনঃপরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা বাতিলের দাবিও রয়েছে।
পুলিশের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আট ঘণ্টা করা এবং অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইমের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে ১১ দফা দাবিতে।
এসময় কর্মকর্তারা কনস্টেবলদের দাবির যৌক্তিকতা আছে বলে স্বীকার করে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন ও অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশনের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। আমরা দলীয় না হয়ে লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে চাই।’
তিনি বলেন, পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে না পরলে এত লাশ পরত না। নতুন আইজিপি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই মনে হচ্ছে আমরা আগের মত করে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
মাহাতাব উদ্দিন আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি কর্মবিরতি পালন করলেও পুলিশ দায়িত্বশীল। এসময়ে তারা জনগণের সেবা দিতে না পারলেও নিজেদের ব্যারাক পাহারা দিচ্ছেন।
এসময় মাহতাব প্রশ্ন রেখে বলেন, নগরীর ১৬টি থানা। তার মধ্যে ১২টি থানা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা কীভাবে জনগণের সেবা দিব?
অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশকে সাংবাদিকরা আন্দোলনের গুলিতে নিহতদের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে হবে আমাদের হাত–পা বেঁধে দেওয়া হয়। আমরা আগে থেকেই স্বাধীন পুলিশ কমিশন চেয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের তা দেয়া হয়নি।’
পুলিশের গুলিতে কারো মৃত্যু হয়নি দাবি করে ওয়ারিশ বলেন, ‘কাদের গুলিতে এসব মৃত্যু হয়েছে সেগুলো তদন্ত করে বলতে হবে। আমার সহকর্মীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি।’
পরে পুলিশ লাইন্স গেট থেকে একটি মিছিল বের হয়ে আকরাম হোসেন ব্যারাকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
অপরদিকে ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম, ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের স্ব স্ব ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে কনস্টেবলদের বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করে মিছিল করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।