দশতলার পরিবর্তে এখন হবে ৬ তলা ভবন

নগরীর দুই সরকারি কলেজ ।। প্রকল্প থেকে বাদ বাকলিয়া সরকারি কলেজ ।। যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন শিক্ষাবিদদের

রতন বড়ুয়া | শনিবার , ১০ জুন, ২০২৩ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের সরকারি কলেজসমূহের বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় নগরীর তিনটি সরকারি কলেজে (সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ ও বাকলিয়া সরকারি কলেজ) দশতলা বিশিষ্ট একটি করে নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল। তবে সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দশতলার পরিবর্তে এখন ৬ তলা ভিতের ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ হবে দুটি কলেজে। আর প্রকল্পের তালিকা থেকেই নাম বাদ পড়েছে সরকারি বাকলিয়া কলেজের। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, শুরুতে প্রকল্পের ডিপিপিতে আওতাভুক্ত সবকয়টি সরকারি কলেজে ৬ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল। পরে বিভাগীয় শহরের কলেজগুলোতে ৬ তলার স্থলে দশতলা ভবন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সর্বশেষ গত ২৩ মে প্রকল্পটির সংশোধিত ডিপিপির প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়। এতে বিভাগীয় শহরগুলোর কলেজগুলোতেও ৬ তলা ভিতের উপর ৬ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. খন্দকার মুজাহিদ আজাদীকে বলেন, শুরুতে সবকয়টি কলেজেই ৬ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল। পরে বিভাগীয় পর্যায়ের ৮১টি কলেজে ৬ তলার স্থলে দশতলা ভবন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্তে বিভাগীয় সদরের এসব কলেজের ভবনগুলোও ৬ তলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে এসব নতুন ভবন নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন হবে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, গভঃকর্মাশিয়াল ইনস্টিটিউট থেকে সরকারি কলেজে রূপান্তর হওয়া দেশের ১৬টি কলেজ এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিল। তবে সম্প্রতি এই ১৬ প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের আওতায় নগরীর বাকলিয়া সরকারি কলেজ এ প্রকল্প থেকে বাদ পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি গভঃকমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট থেকে সরকারি কলেজে রূপান্তর করা হয়েছিল।

প্রকল্প তালিকা থেকে বাকলিয়া সরকারি কলেজের বাদ পড়া নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার গতকাল আজাদীকে বলেন, প্রকল্প থেকে বাকলিয়া সরকারি কলেজের বাদ পড়ার বিষয়টি তালিকা হাতে পেলে নিশ্চিত করে বলতে পারবো। আমরা এখনো তালিকা হাতে পাইনি। তবে মহানগরে দুটি কলেজের (হাজী মুহাম্মদ মহসিন ও সরকারি মহিলা কলেজ) নতুন ভবন হওয়ার কথা শুনেছি।

অবশ্য, প্রকল্প থেকে রুপান্তর হওয়া ১৬টি কলেজের বাদ পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. খন্দকার মুজাহিদ। এই ১৬ কলেজের মধ্যে বাকলিয়া সরকারি কলেজও একটি বলে জানান তিনি।

৬ তলা ভবনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন : এর আগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি সিটি কলেজে দশ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ হয়েছে। দুটি কলেজে দশ তলা ভবন হলেও অন্যগুলোতে সিদ্ধান্ত বদল করে দশ তলার স্থলে ৬ তলা ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জায়গা সংকট প্রকট। এমনিতেই হিবিজিবি অবস্থা। ভবিষ্যতে কোন অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হলে জায়গা সংকটের কারণে তা দূরুহ হয়ে দাঁড়াবে। এমন পরিস্থিতিতে নগরীর সরকারি স্কুলকলেজগুলোতে এই মুহুর্তে কোন অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলে তা যেন অবশ্যই বহুতল ভবন হয়। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় নিলে বহুতল ভবন ছাড়া এ মুহুর্তে কোন অবকাঠামো নির্মাণ যুক্তিযুক্ত নয় মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান আজাদীকে বলেন, এই সময়ে যদি বহুতল ভবন ছাড়া কোনো অবকাঠামো করা হয়, তবে তা হবে জায়গার বড় ধরনের অপচয়। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অবশ্যই বহুতল ভবন করা দরকার। এখন যদি বহুতল করা না যায়ও, অন্তত বহুতল ভবনের (১০/১৫ তলার) ভিতটা করে দেয়া যায়। অর্থাৎ দশতলা ভিত করে প্রয়োজনে ৬ তলা পর্যন্ত করুক। প্রয়োজনের ভিত্তিতে পরে উপরের ফ্লোরগুলো তোলা যাবে। কিন্তু এই সময়ে শুধু ৫/৬ তলা ভিতের ভবন করার কোনো যৌক্তিকতা দেখিনা। বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে এখানকার জায়গার ব্যবহারে খুবই সতর্ক হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে যখন প্রয়োজন হবে, তখন এসব প্রতিষ্ঠানে ভবন করার মতো জায়গা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

প্রকল্পের তালিকা থেকে একটি কলেজের বাদ পড়াসহ চট্টগ্রামে শিক্ষার সার্বিক সংকট নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, আমার কাছে এই চট্টগ্রামকে একটি অভিভাবকহীন শহর বলেই মনে হয়। সব সরকারের আমলেই এই চট্টগ্রাম থেকে অন্তত ৫/৭ জন করে বাঘা বাঘা মন্ত্রী ও মন্ত্রী পদমর্যাদার ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা ছিলেন। কিন্তু চট্টগ্রামের উন্নয়নে সেভাবে কারও নজর ছিল বলে আমি মনে করি না। একজন ছিলেনতিনি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। যদিও তার সাথে আমার বহু সিদ্ধান্তের দ্বিমত ছিল। এরপরও তার এই গুণের বিষয়টি আমি স্বীকার করি। চট্টগ্রামের প্রতি যদি কারও ফিলিংস থেকে থাকে, তবে তা মহিউদ্দিন চৌধুরী একজনেরই ছিল। চট্টগ্রামের কিভাবে আরো উন্নতি করা যায়, সে চিন্তা তারই ছিল। কিন্তু এখন মহিউদ্দিন চৌধুরী নেই। চট্টগ্রামও অভিভাবকহীন একটি শহরে পরিণত হয়েছে।

এখন শুনছি জায়গার অভাবে চট্টগ্রামে স্কুলকলেজ হয়না, হাসপাতাল হয়না; নতুন ভবন হয়না। আবার প্রকল্প তালিকা থেকেও নাম বাদ যাওয়ার কথা শুনছি। এরকম তো হওয়ার কথা না। সরকার জায়গা দিয়ে এত কিছু করতে পারলে কেন স্কুলকলেজ, হাসপাতাল হতে পারবেনা। সংশ্লিষ্ট এলাকার মন্ত্রীএমপি ও রাজনীতিকরা কোথায়। এসবই চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদদের চরম ব্যর্থতা। এটা বলতে আমার দ্বিধা নেই।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে। হিসেবে প্রতিটি কলেজে ৬ তলা ভবনের প্রকল্প ব্যয় দাাঁড়াচ্ছে ১২ কোটি টাকার কিছু কমবেশি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে এই প্রকল্পের প্রশাসনিক আদেশ জারি হয়। বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় চার বছর। তবে করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন এ প্রকল্প থমকে থাকে। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সার্বিক প্রক্রিয়া মোটামুটি শেষ হওয়ায় আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীর বাকি উন্নয়নের দায়িত্বও নিতে চাই : ভূমিমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবারইয়ারহাট-করেরহাট সড়ক বেহাল