দরকার সহমর্মিতায় ভরা পরিবেশ ও সমতাপূর্ণ দৃষ্টি

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

| শুক্রবার , ২ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের চরম আতঙ্কের মধ্যে এ দিবস পালিত হতে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্ব যখন নাকাল, তখন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা আরও বেশি নাজুক। এই সময়ে তাদের বিশেষ যত্ন ও সেবার প্রয়োজন। তাদের দিকে বেশি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এ বছর করোনা ভাইরাস মহামারি আকার না নিলে হয়তো বছরের এই একটি দিন সামান্য সময়ের জন্য হলেও সবার মনোযোগ পেতো অটিজমে ভুগতে থাকা মানুষেরা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম হতো না। আমরা সকলে অপেক্ষা করছি কবে এই মহামারি থেকে সবাই মুক্তি পাবো। দিনটিতে দেশের সব স্কুল-কলেজে নীল বাতি প্রজ্বলন, আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) সই করা একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাউশির অধীনে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলোতে ১৪তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০২১ উদযাপন করা হবে। এ দিনকে কেন্দ্র করে আগামী ৩ এপ্রিল সব স্কুল-কলেজে নীল বাতি প্রজ্বলন করা হবে। এ দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সচেতনতায় অনলাইনে আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। ‘মহামারি-উত্তর বিশ্বে ঝুঁকি প্রশমন, কর্মক্ষেত্রে সুযোগ হবে প্রসারণ’ এ প্রতিপাদ্যে এবার বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হচ্ছে।
অটিজম এক ধরনের জটিল নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বা স্নায়ুবৈকল্য- এটি জানা থাকলেও এর ধরন-ধারণ সম্পর্কে আমাদের অনেকের তেমন জানা নেই। অটিজমে যেসব আচার-আচরণ, উপসর্গ ও প্রভাব দেখা যায় সে সম্পর্কেও আমরা কমই জানি। অনেক অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবা শুধু এটুকু জানেন, তাদের সন্তান অন্য আর দশটা শিশুর মতো নয়। তাদের আচরণ সবার থেকে আলাদা ও অস্বাভাবিক। অন্যদিকে স্কুলের শ্রেণিতে, খেলার মাঠেও এরা স্বাভাবিক নয়। ফলে মা-বাবা ও শিক্ষক উভয়েরই অনুমান এই শিশুর মধ্যে কোনো সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া অটিজমের বেশকিছু বিষয় এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। ফলে এসব শিশুকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ও অসচেতনতার অভাব নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অটিজম কোনো স্থায়ী অবস্থা নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ইতি বা নেতিবাচক পরিবর্তন হতে পারে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ শিশুর মধ্যে রোগের কারণও বাড়তেও পারে। কোনো কোনো শিশুর এপিলেপ্সি দেখা দিতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালে এমন শিশুরা বিষণ্নতায় ভুগতে পারে। তাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এদের অনেকেই নিজের কাজ করতে পারে এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কোনো কোনো শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি কথা বলতে পারে এবং অন্যের সঙ্গে মিশতেও পারে। চোখে চোখ রাখার ব্যাপারে তাদের উন্নতি করা সম্ভব। তাদের বাচনিক অথবা অবাচনিক যোগাযোগের দক্ষতাও বাড়ানো সম্ভব। বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে তারা মেধাবী, সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন এবং চিন্তার দিক থেকে তারা সক্ষম থাকতে পারে।
অটিজম সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ ও চেষ্টা থাকলেও উপযুক্ত তথ্য, বই-পুস্তক, গবেষণা এবং তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই বলে সেটিও সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এক্ষেত্রে মা-বাবাসহ জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে সে কাজটি কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে বিশ্বাস। এই সচেতনতা প্রারম্ভিক পর্যায়ে অটিজম নির্ণয়ে এবং ইন্টারভেনশনেও সহায়তা করতে পারে। অটিজম চিকিৎসায় এটি একটি বেসিক শর্তও বটে। এটি এদের শিক্ষা, চিকিৎসা, সামর্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে উন্নত পরিষেবা পরিকল্পনায় সহায়ক হতে পারে।
এ শিশুদের সমস্যা কখনোই পুরোপুরি দূর হয় না। তবে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব। স্বল্প মাত্রায় অটিজম, যেমন এসপারজার সিনড্রোম অথবা হাই-ফাংশনিং অটিজমের ক্ষেত্রে যথাযথ সহযোগিতা, সমর্থন ও শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিশু পরিণত বয়সে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে। উচ্চমাত্রায় অটিজমের ক্ষেত্রে পরিণত বয়সেও স্বনির্ভর দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্ভব নাও হতে পারে। অটিজমের শিকার একজন মানুষ আর দশজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে কোনোদিক দিয়ে কম নয়। তাদের দরকার শুধু একটি সহমর্মিতায় ভরা পরিবেশ, শেখার সুযোগ আর তাদের প্রতি সমতাপূর্ণ দৃষ্টি। এটুকু দিতে পারলেই এই মানুষগুলো সমাজের সবাইকে সাথে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, এ আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় গণপিটুনিতে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে